জ্বালানির দর আবারও ৮০ ডলারের নিচে, দেশে কমবে কবে

জ্বালানি তেল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্ব অর্থনীতিতে যতই মন্দার ছায়া ঘনিয়ে আসছে, ততই কমছে আত্মবিশ্বাস। সেই সঙ্গে কমছে জ্বালানির দাম। গত সপ্তাহে কিছুটা বৃদ্ধির পর জ্বালানি তেলের দাম আজ বুধবার আবারও কমেছে।

আজ বেলা ১১টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি নিচে নেমে এসেছে ৭৯.৪৪ ডলারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর যা এই প্রথম। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডব্লিউটিআই ক্রুড দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলারের নিচে নেমে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ২২ ডলারে। সূত্র অয়েল প্রাইস ডট কম।

বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দর ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের নিচে নেমেছে বেশ কিছু দিন আগেই। চীনে কোভিড-নীতি বিরোধী বিক্ষোভের জেরে তা আরও পড়ছে। চাহিদা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রায় ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কমেছে ব্রেন্ট ক্রুডের দর।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরই বাড়ছিল অপরিশোধিত তেলের দাম। একটা সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দর ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলার পেরিয়ে যায়। অথচ কোভিডজনিত লকডাউনের শুরুর দিকে ব্রেন্ট ক্রুডের দর শূন্যেরও নিচে নেমে গিয়েছিল। গত বছরের মাঝামাঝি বিশ্বজুড়ে কোভিডের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া শুরু হলে জ্বালানি তেলের দাম আবার বাড়তে থাকে।

এমন একসময় ২০২১ সালের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধি করে লিটারে ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তার আগে এই দুই জ্বালানি তেলের দাম ছিল লিটারে ৬৫ টাকা। এরপর ২০২২ সালের আগস্টে আবারও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করে সরকার। এক ধাক্কায় ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম ৪৬ টাকা আর পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। এর প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অনেকটাই বেড়ে যায়। সরকারি পরিসংখ্যানেই মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের ঘর পেরিয়ে যায়।

গত বছরের নভেম্বরে যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়, তখন বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দর ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের আশপাশেই ছিল। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তেলের দর দফায় দফায় বেড়েছে। আগস্টে মূল্যবৃদ্ধির সময় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে ফেব্রুয়ারি ২২ থেকে জুলাই ২২ পর্যন্ত বিপিসির লোকসান ছিল প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা, এ প্রেক্ষাপটেই সরকারকে বাধ্য হয়ে মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে।

এ ছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা বারবারই বলেছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারেও দাম কমানো হবে। এখন জ্বালানির দর আবারও ৮০ ডলারের নিচে নামায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, দেশে কবে জ্বালানির দাম কমবে।

দাম হ্রাসের প্রসঙ্গে বারবার বলা হয়, বাজার স্থিতিশীল হলে দাম কমানো হবে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে মন্দাভাব বিরাজ করবে। চাহিদা খুব একটা বাড়বে না। তবে চীন শূন্য কোভিড নীতি থেকে ত্যাগের কথা বললেও সেখান থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে। এই বাস্তবতায় জ্বালানি তেলের দাম আর খুব একটা বাড়বে না বলেই বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস।