অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। নতুন সরকারের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলেছে, চলতি অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় এসব বিষয়ে আরও আলোচনা হবে।
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সপ্তাহব্যাপী বৈঠক শেষে আজ সোমবার আইএমএফ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে। সংস্থাটির গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামস্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি মিশন গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আইএমএফের প্রতিনিধিদল বেসরকারি খাত, থিঙ্কট্যাংক তথা গবেষণা সংস্থা, অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সহযোগীদের সঙ্গেও বৈঠক করে। আজ ছিল মিশনের শেষ দিন। এদিন আইএমএফ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকার ও অন্যান্য অংশীজনের আতিথেয়তা এবং তাদের অকপট আলোচনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
সাম্প্রতিক গণ–অভ্যুত্থানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অনেকে—এ কথা উল্লেখ করে তাঁদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, এমন কঠিন সময়ে বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে আইএমএফ।
সংস্থাটি বলেছে, দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, যা রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল করা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। এখন অর্থনীতিও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার উঠে যায় দুই অঙ্কের ঘরে। উল্লেখযোগ্যভাবে স্থবির হয়ে পড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। তার ওপর আন্দোলনের কারণে অস্থিরতা দেখা দেয়। সঙ্গে যোগ হয় বড় আকারের বন্যা। লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির অবনমনের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। কমে যায় রাজস্ব সংগ্রহের গতি। এমন সময়ে এ ঘটনা ঘটেছে, যখন ব্যয়ের চাপ বেড়েছে এবং পুঞ্জীভূত হয়েছে অভ্যন্তরীণ বকেয়া।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ বলেছে, আর্থিক খাতের দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠেছে। তাই উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নীতি ও সংস্কারের ওপর উন্মুক্ত ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছে তারা। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অংশ হিসেবে নীতি পদক্ষেপের সমন্বয়, চলমান সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখা এবং খুব প্রয়োজনীয় নয়, এমন খাতগুলোতে যৌক্তিকভাবে ব্যয় করার সরকারি উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি নিজেকে ‘বাংলাদেশের অবিচল অংশীদার’ আখ্যা দিয়েছে। বলেছে, বাংলাদেশ এবং এর জনগণকে সমর্থন করার জন্য আইএমএফ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আইএমএফ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। এর দুই দিন পরই ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার দেয় তারা। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তিতে আসে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। চলতি বছরের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে ছাড় হয় আরও ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্যে আরও বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার, যা ২০২৬ সাল নাগাদ আরও চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।
আইএমএফ জানিয়েছে, তাদের সমর্থিত চলমান ঋণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে তারা। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোরদার করা এবং টেকসই ও ন্যায়সংগতভাবে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়ানো।
এদিকে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির বাইরে আরও প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ আইএমএফের কাছে চাইতে পারে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে এক মাস ধরে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। এ নিয়ে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় চূড়ান্ত আলোচনা হবে বলে কয়েকবারই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, গত এক সপ্তাহের বৈঠকগুলোতে আইএমএফ বাজেট বাস্তবায়ন, সরকারি ঋণ কমানো, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সম্প্রসারণ, ভর্তুকি কমানোর কৌশল নির্ধারণ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে।