ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলামসহ (বসা মাঝে) অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ী দলের বিতার্কিকেরা। আজ শনিবার ঢাকায় ঢাকায় এফডিসিতে
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলামসহ (বসা মাঝে) অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ী দলের বিতার্কিকেরা। আজ শনিবার ঢাকায় ঢাকায় এফডিসিতে

বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকনির্দেশনা নেই: ছায়া বিতর্কে মির্জ্জা আজিজ

নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৬ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার থাকলেও এই লক্ষ্য অর্জনে প্রকৃত অর্থে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্যও বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন কঠিন হবে। এ ছাড়া কর প্রশাসনে সুশাসন ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। যে কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর আহরণ করতে পারছে না।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ঢাকায় এফডিসিতে আজ শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিয়ে থাকে সেটি সঠিক নয়। তথ্য গোপন করার কৌশল সুশাসনের অন্তরায়। বাজেট অর্থায়নে দেশীয় ব্যাংকের ওপর অতিমাত্রায় ঋণনির্ভর হলে উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ব্যাহত হবে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতের যে পরিস্থিতি, তা নিয়েও চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশে যত কর শনাক্তরণ নম্বর বা টিআইএনধারী আছে, তাদের অর্ধেকও আয়কর রিটার্ন দাখিল  করে না। এ নিয়ে এনবিআর অনুসন্ধান করতে পারে। বর্তমানে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ রয়েছে, তা পরিশোধে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তিনি বলেন, আঞ্চলিক বৈষম্যের পাশাপাশি শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বৈষম্য বাড়ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী নির্ধারণে রাজনৈতিক বিবেচনা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কর্তৃত্বের কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এ কর্মসূচির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, রিজার্ভের ঘাটতি, ডলারের উচ্চ মূল্য, আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা, অর্থ পাচার ও লাগামহীন দুনীর্তিসহ নানা চ্যালেঞ্জের পরিস্থিতিতে, অর্থাৎ একটি কঠিন বা বৈরী সময়ে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট দেওয়া হয়েছে। এ বাজেটে নানা সংকটের কথা বলা হলেও এসব থেকে উত্তরণে বাজেটে কৌশলগত কোনো স্পষ্টতা নেই। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর কোনো পদক্ষেপ নেই। অর্থ পাচার রোধ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, অপচয় কমানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।

হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, যাঁরা কর ফাঁকি দেন, তাঁদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁদের ওপর বাড়তি কর আদায়ের ছক দেখা গেছে বাজেটে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা, পুঁজি পাচার ও হুন্ডি বন্ধসহ ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো উদ্যোগের কথা বাজেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার ঘাটতি বাজেট পূরণে রয়েছে ব্যাপকভাবে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরতা।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, সুশাসন, জবাবদিহি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

‘প্রস্তাবিত বাজেট অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের হারিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকেরা জয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রোকেয়া পারভীন, এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক রিজভী নেওয়াজ ও ইকবাল আহসান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়।