মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট আরোপ করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ। কিন্তু ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিডেট বা মেট্রোরেল কোম্পানি এই ভ্যাট দিতে চায় না। তাদের যুক্তি, এই মেট্রোরেলে অভিজাত শ্রেণি ভ্রমণ করে না, সাধারণ মানুষ ভ্রমণ করে।
মেট্রোরেল কোম্পানির এই জবাব পাওয়ার পর সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো নির্দেশনা মেলেনি।
বর্তমান ভ্যাট আইন অনুযায়ী, যেকোনো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিধান আছে। ঢাকার মেট্রোরেল পুরোপুরি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং এটি গণপরিবহন।
গত ডিসেম্বরে প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে শেওড়াপাড়া ও উত্তরা দক্ষিণ ছাড়া সব স্টেশন চালু হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৬০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। ভ্যাট বসানো হলে মেট্রোরেলের টিকিটের দাম বাড়বে। খরচ বাড়বে যাত্রীদের। ৬০ টাকার টিকিটের দাম হবে ৬৯ টাকা।
বর্তমানে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করে। আগামী জুলাই থেকে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চালানোর পরিকল্পনা করছে মেট্রোরেল কোম্পানি। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করবে, এমন কথা আছে। মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে উত্তরা থেকে ভাড়া হবে ১০০ টাকা।
কর্তৃপক্ষ মেট্রোরেলের ভাড়ার তালিকা প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই মত দিয়েছিলেন যে ভাড়া অনেক বেশি পরিমাণে নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ২২ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদী ভ্যাট আরোপের আহ্বান জানিয়ে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (মেট্রোরেল কোম্পানি) চিঠি দেন। ওই চিঠিতে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কোচ হিসেবে মেট্রোরেল চলাচলকারী যাত্রীদের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা মেট্রোরেল কোম্পানি ওই চিঠির জবাব দেয়। জবাবে বলা হয়, মেট্রোরেলে সব শ্রেণির মানুষ একই ভাড়া দিয়ে ওঠেন। তাই এ ধরনের পরিবহনে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোরেল কোম্পানির পরিচালক ও কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভ্যাট আইন অনুযায়ী রেলের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কোচের বা এসি টিকিটের ওপর ভ্যাট আরোপ আছে। এ ক্ষেত্রে দর্শনটি হলো, একই ট্রেনে নন-এসি টিকিটও আছে। টিকিটেও শ্রেণি বিভেদ আছে। সাধারণত অভিজাত শ্রেণির যাত্রীরা এসি টিকিট কাটেন। তাঁদের ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ ঠিক আছে।’
কিন্তু মেট্রোরেলে সবার জন্য একই মূল্যের একই ধরনের টিকিট, এ কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য, নিম্ন আয়, নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষসহ সব শ্রেণির মানুষ মেট্রোরেলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত যাবেন। তাই ভ্যাট আরোপ করা ঠিক হবে না। তিনি আরও বলেন, ভ্যাট আরোপ করলে মেট্রোরেলের ভাড়া আরও বাড়বে।
এদিকে মেট্রোরেল কোম্পানির কাছ থেকে এই জবাব পাওয়ার পর গত সপ্তাহে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানার কাছে এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনার। তবে এখনো কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি এনবিআর। এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য জাকিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে শিগগিরই এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।’
ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিডেট বা মেট্রোরেল কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলে এখন উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রতিদিন ৮-৯ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়। এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ ২৫ হাজারের বেশি যাত্রী মেট্রোরেলে উঠেছেন।