সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি তিন কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। একেক কার্গো এলএনজি মানে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ গ্যাস। দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে এই এলএনজি আমদানি করা হবে।
ঢাকায় সচিবালয়ে আজ বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির বৈঠকে এলএনজি আমদানির এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড থেকে আমদানি করা হবে এক কার্গো এলএনজি। প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ৯ দশমিক ৬৮ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ৪১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড প্রতি ইউনিটের দাম ধরেছিল ৯ দশমিক ৬৯ মার্কিন ডলার। ফলে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পায় ভিটল এশিয়া।
আরেক প্রস্তাবে প্রতি ইউনিট ৯ দশমিক ৮৯ ডলার হিসাবে কাজ পায় টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার। এতে মোট খরচ পড়বে ৪২৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ভিটল এশিয়া এতে অংশ নিয়ে প্রতি ইউনিটের দর ধরেছিল ১০ দশমিক ৩৬ ডলার। ফলে তারা এই কাজ পায়নি।
অন্য এক প্রস্তাবে সিঙ্গাপুরভিত্তিক গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি ইউনিটের দাম ৯ দশমিক ৪৯ মার্কিন ডলার দর দিয়ে কাজ পেয়েছে। এতে সরকারের মোট খরচ পড়বে ৪১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে ভিটল এশিয়া সিঙ্গাপুর ৯ দশমিক ৫৮ মার্কিন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জি এলপি ১০ দশমিক ০৮ ডলার দাম প্রস্তাব করেছিল।
এ ৩টিসহ মোট ১০টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। এতে সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ৩ হাজার ১১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০ ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে বৈঠকে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এতে অর্থায়ন করবে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি)। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বিআইটিইএস লিমিটেড ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজগুলো সরবরাহ করবে।
মো. মাহমুদুল হোসাইন খান আরও বলেন, কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনা হবে। প্রতি টন সারের দাম ৩৬৬ দশমিক ৩৭ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে মোট ব্যয় হবে ১২০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
এদিকে মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকে আজ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও রাইস ব্রান অয়েল (কুঁড়ার তেল) কেনার প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৪৭ কোটি ৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল, ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ও ৫০ লাখ লিটার রাইস ব্রান বা কুঁড়ার তেল রয়েছে।
মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, প্রতি লিটার ১৫২ টাকা ৯৮ পয়সা হিসাবে সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে সয়াবিন তেল কেনা হবে। আগে এর দর ছিল ১৫৫ টাকা ৯৭ পয়সা।
১০ হাজার টন মসুর ডালের মধ্যে সেনা কল্যাণ সংস্থা ও নাবিল নাবা ফুড লিমিটেড থেকে ৫ হাজার টন করে কেনা হবে। কেজি ১০২ টাকা ৭৫ পয়সা হিসাবে এই ডাল কিনতে মোট ব্যয় হবে ১০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
প্রতি লিটার ১৫২ টাকা দরে ৫০ লাখ লিটার রাইস ব্রান অয়েল বা কুঁড়ার তেল কেনা হচ্ছে মজুমদার ব্রান ওয়েল মিলস লিমিটেড এবং মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে। এতে ব্যয় হবে ৭৬ কোটি টাকা।