অবরোধের কারণে পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় চাহিদা কমে গেছে। তাতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বৃহত্তম এ পাইকারি বাজারে সবজির দাম অর্ধেকে নেমেছে।
টানা অবরোধে বগুড়ার বৃহত্তম পাইকারি মোকাম মহাস্থান বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম কমে গেছে। কোনো কোনো সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে অর্ধেক হয়ে গেছে। দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। কৃষক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, অবরোধের কারণে পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সবজির দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এদিকে পাইকারি বাজারে সবজির দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমলেও খুচরা বাজারে এখনো সবজির দাম চড়া। এ জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। দেশের সবজির অন্যতম বড় পাইকারি মোকাম মহাস্থান বাজারে গতকাল সোমবার শীতকালীন সবজির রেকর্ড সরবরাহ ছিল। কিন্তু সবজির কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি বিক্রেতারা।
কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে মহাস্থান বাজারে প্রতি কেজি ফুলকপির পাইকারি দাম ছিল ৪৫ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগের ৪০ টাকা কেজির মুলার দাম অর্ধেক কমে ২০ টাকা এবং ৪০ টাকার বেগুন ২৫ টাকায় নেমেছে।
এ ছাড়া প্রতিকেজি পটোল ২৩ টাকা, বরবটি মানভেদে ১২ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ২৫ টাকা, এক কেজি ওজনের বাঁধাকপি প্রতিটি ২২ টাকা, শিম ৬০ টাকা, পেঁপে ১১ টাকা, ও মিষ্টি লাউ ১৮ টাকায় বিক্রি হয়। ১৬০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কমে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায় আর ৪০ টাকা কেজির শসা ২৫ টাকা কেজিতে নেমেছে। এভাবে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে এ বাজারে প্রতিটি বাঁধাকপি ৩৫ টাকা, পটোল ও বেগুন প্রতি কেজি ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, শিম মানভেদে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মহাস্থান বাজারে আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবরোধের কারণে মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি বেড়েছে ভাড়াও। এতে ব্যাপারী ও আড়তদারেরা খুব বেশি সবজি কিনছেন না। বাড়তি দামও দিচ্ছেন না। ফলে পচনশীল পণ্য হওয়ায় সস্তায় সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা। গতকাল মহাস্থান বাজারে নিজের খেতের পাঁচ মণ ফুলকপি বিক্রির জন্য এনেছিলেন রায়মাঝিড়া গ্রামের সবজি চাষি বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক আগেও প্রতি মণ ফুলকপি ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছি। সেই ফুলকপির দাম সোমবার প্রতি মণ এক হাজার টাকায় নেমেছে। অবরোধের কারণে আমাদের মতো গরিব চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি। কষ্ট করে সবজি চাষ করে এখন ঠিকমতো দাম পাচ্ছি না।
তেলিহারা গ্রামের সবজি চাষি নাসির উদ্দিন গতকাল বিক্রির জন্য ১০ মণ মুলা এনেছিলেন এ বাজারে। তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগে প্রতি মণ মুলা বিক্রি হয় ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এখন সেই দাম কমে নেমে এসেছে ৮০০ টাকায়।
কৃষক বেলাল হোসেন ও নাসির উদ্দিনের মতো অবস্থা এই এলাকার হাজারো চাষির। উৎপাদন ভালো হলেও দাম না পাওয়ায় এসব চাষি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তাঁদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
মহাস্থান বাজারের আড়তদার মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মোকামে পণ্য সরবরাহ কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় দামও পড়ে গেছে।
মহাস্থান বাজারের সবজি, কাঁচা ও পাকা মালের ব্যবসায়ী এবং আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটের মোকামে সবজি পাঠাতে এখন বাড়তি ট্রাকভাড়া গুনতে হচ্ছে। অবরোধের আগে বগুড়া থেকে ঢাকার ট্রাকভাড়া ছিল ২০ হাজার টাকা।
এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। আগে চট্টগ্রাম ও সিলেটের ট্রাকভাড়া ছিল ৩০ হাজার। এখন তা বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হয়েছে। ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কথা, কিন্তু চাহিদা কমে যাওয়ায় উল্টো দাম পড়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত বগুড়া অঞ্চলে গত শীত মৌসুমে ২৩ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি শীতকালীন সবজি উৎপাদিত হয়। চলতি মৌসুমেও রেকর্ড সবজি চাষ হয়েছে।