ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ–সংক্রান্ত বিধিবিধানে কিছু পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিকে আবশ্যিক শর্ত হিসেবে নির্ধারণ করা হলেও ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী ও পেশাদার হিসেবে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ক্ষেত্রে তা শিথিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের ব্যাংক কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা যাবে বলে আগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা হিসাব পেশায় নিয়োজিত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস কিংবা কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেকোনো বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হলেও বিবেচনা করা যাবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ বা ব্যবসায় প্রশাসন, আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক, আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থ বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা যাবে।
তবে ডিজিটাল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যোগ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নতুন প্রবর্তিত ডিজিটাল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত শিক্ষা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে গণ্য হবে।
ব্যাংক কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ এবং তাদের দায়দায়িত্ব ও সম্মানী নির্ধারণ করে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো এ বিধিবিধান জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই প্রজ্ঞাপনের দুটো অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করে আজ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করল।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, দুটি অনুচ্ছেদের প্রতিস্থাপন ছাড়া আগের প্রজ্ঞাপনের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জারি করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে ৪৫ বছরের কম বয়সের কেউ ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। স্বতন্ত্র পরিচালকদের বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ বছর। এ ছাড়া ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে গেলে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়ী বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
নতুন বিধানে বলা হয়, কোনো ব্যাংকে কারও নিজের বা পরিবারের নামে শেয়ার থাকলে কিংবা পরিবারের কেউ ওই ব্যাংকে লাভজনক কোনো পদে কর্মরত থাকলে স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়া যাবে না। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরাসরি অভিযোগ বা মতামত জানাতে পারবেন।
কোনো ব্যক্তি পাওনাদারের প্রাপ্য পরিশোধ না করলে বা পাওনাদারের সঙ্গে আপসরফার মাধ্যমে পাওনা আদায় থেকে অব্যাহতি না পেলে তিনি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন না। করখেলাপি, ঋণখেলাপি, জাল–জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বা কারও বিরুদ্ধে আদালতের রায়ে বিরূপ পর্যবেক্ষণ থাকলে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
পাশাপাশি নিবন্ধন বাতিল হওয়া বা অবসায়িত কোম্পানির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিও ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না বলে নতুন বিধানে বলা হয়। একজন স্বতন্ত্র পরিচালক তিন বছর করে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র পরিচালকেরা প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা স্থায়ী সম্মানী পাবেন। আগে অবশ্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের স্থায়ী সম্মানী ছিল না। এ ছাড়া কোম্পানির পর্ষদ বা সহায়ক কমিটির প্রতিটি সভায় উপস্থিতির জন্য সম্মানী হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পাবেন তাঁরা।