গত বছর নেপালের বড় শহরগুলোর একটিতে যখন নতুন একটি বিমানবন্দর চালু করা হলো, তখন প্রত্যাশা করা হয়েছিল যে এটি দেশটির উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উঠবে নতুন মাত্রায়। কারণ, ওই বিমানবন্দরের জন্য অর্থ দিয়েছে চীন, বানিয়েও দিয়েছে তারা।
কিন্তু পোখারা বিমানবন্দর হয়ে ওঠে আরেকটি বিষয়ের প্রতীক, এটিকে বিবেচনা করা হয় চীনের আন্তর্জাতিক অবকাঠামো প্রকল্পের ফাঁদ হিসেবে। চীনের এ ধরনের অবকাঠামোগুলোর পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, কিন্তু নির্মাণের মান হয় খারাপ। ফলে যেসব দেশ ঋণ করে এ ধরনের প্রকল্প করে, তারা ঋণের চোরাবালিতে ডুবে যায়।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার নেপালের এক মাসের পুরোনো সরকার চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছে বিমানবন্দর প্রকল্পের জন্য নেওয়া ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ঋণ অনুদানে রূপান্তর করার জন্য। সেটা করা হলে হিমালয় পাহাড়মালার দেশটি এই ঋণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। নেপালের নতুন এই সরকারের নেতৃত্বে আছে দেশটির সবচেয়ে বড় কমিউনিস্ট পার্টি।
পোখারা বিমানবন্দরটি শুরু থেকেই নানা ধরনের সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এটি চালু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেই পোখারামুখী একটি অভ্যন্তরীণ বিমান নদীর খাদে বিধ্বস্ত হয়, যে দুর্ঘটনায় ৭২ জনের মৃত্যু ঘটে। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক কোনো বিমান সংস্থাকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়। ফলে নির্মাণ খরচ ওঠানো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
গত এক বছরে নেপালের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ও একটি সংসদীয় কমিটি বিমানবন্দর নির্মাণের বিষয়ে তদন্ত করছে।
গত বছরে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং বিমানবন্দরের নির্মাণ খরচ একদিকে নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়েছে, অন্যদিকে নেপাল নির্মাণের মান নিশ্চিত করার যে চেষ্টা করেছিল, তার অবমূল্যায়ন করেছে।
তবে বেইজিং যদি নেপালের অনুরোধে সাড়া দেয়, তাহলে এটি হবে আরেকটি ইঙ্গিত যে কাঠমান্ডুর নতুন সরকারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে।
গত জুলাই মাসে নেপালের সবচেয়ে বড় কমিউনিস্ট পার্টি নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে একটি জোট সরকার গঠন করে। পার্লামেন্টে কংগ্রেস সবচেয়ে বড় দল। সরকারের প্রধান কে পি ওলি। ক্ষমতায় আসার পরে তাঁর সরকার চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হতে একেবারেই সময় নষ্ট করেনি।
থাইল্যান্ড র্যাঙসিট ইউনিভার্সিটির গবেষক ও নেপালের সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বিনজ বাসনিয়াত বলেন, চীন সম্ভবত পোখারা বিমানবন্দরের জন্য দেওয়া ঋণ অনুদানে রূপান্তর করবে। কারণ, বেইজিং নেপালের কমিউনিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায়।
বিনজ বাসনিয়াত মনে করেন, নেপালের অনুরোধ রেখে চীন আরও সুবিধা পেতে পারে। তাঁর কথায়, ‘দুর্নীতির বিষয়ে যে তদন্ত হচ্ছে, তা দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। কেউই আর এ বিষয়ে কথা বলবে না।’