কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য জাহাজীকরণে বিঘ্ন ঘটায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৈরি পোশাকের বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তাঁরা উদ্বেগ জানিয়েছেন। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে আজ সোমবার বিকেলে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি এস এম মান্নান।
জানা গেছে, সভায় বিশ্বের বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, বর্তমান ব্যবসা-বাণিজ্যে ইন্টারনেটনির্ভর যোগাযোগব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত এক দশকে হরতাল-অবরোধের মতো অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলমান ছিল। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া করোনাকালেও পণ্য ঠিকঠাকভাবে জাহাজে উঠেছে। ক্রেতা প্রতিনিধিরা বাসায় বসেও কাজ করেছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিটা একদমই নতুন। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমেও বিঘ্ন ঘটেছে। পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বন্দরে বিপুল পরিমাণ পণ্যের জট তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যবসায় একধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে অনেক কাজ করতে হবে বলে মনে করেন বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বিজিএমইএর নেতাদের বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে একধরনের নেতিবাচক বার্তা গেছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। যখন সবকিছু বন্ধ করা হয়, তখন সবার মনে এমন সন্দেহ তৈরি হয়, কোনো কিছু লুকানোর চেষ্টা হচ্ছে। ফলে ভাবমূর্তি উন্নয়নে বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বিদেশি ক্রেতা প্রতিনিধিদের সহায়তা প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, ‘পোশাকশিল্পে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রথম দিন থেকেই সরকারের কাজ করে আসছি। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আমরা অল্প সময়ের মধ্যে কারখানা চালু করতে পেরেছি।’
শিল্পের গতি দ্রুত পুনরুদ্ধারের সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে বিদেশি ক্রেতা প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করেন বিজিএমইএর সভাপতি। তিনি বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পাঁচ দিন কারখানা বন্ধ থাকার সময় আমরা বেশ কিছু উৎপাদন ও রপ্তানি হারিয়েছি। ফলে কারখানাগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা যখন টিকে থাকার জন্য চেষ্টা করছিলাম, তখন এ রকম একটি পরিস্থিতি আমাদের শিল্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা।’
বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ক্রেতা প্রতিনিধিদের বর্তমান পরিস্থিতি অবহিত করার পাশাপাশি তাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কারখানার উৎপাদন ও পণ্য জাহাজীকরণে বিলম্বের কারণে মূল্যছাড় কিংবা ক্রয়াদেশ স্থগিতের মতো সিদ্ধান্ত না নিতে আহ্বান জানিয়েছি। ক্রেতা প্রতিনিধিরা এমন পদক্ষেপে যাবেন না বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
জানতে চাইলে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার প্রধান জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এইচঅ্যান্ডএম কোনো সরবরাহকারীর কাছে মূল্যছাড় দাবি করবে না। এমনকি কোনো ক্রয়াদেশও বাতিল বা স্থগিত করবে না। আমরা সেটি বিজিএমইএর নেতৃত্বকেও জানিয়েছি।’
মতবিনিময় সভায় মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের (এমঅ্যান্ডএস) কান্ট্রি ডিরেক্টর বা বাংলাদেশের প্রধান স্বপ্না ভৌমিকসহ ইন্ডিটেক্স, বেস্ট সেলারসহ বিভিন্ন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। অন্যদিকে বিজিএমইএর সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আরশাদ জামাল, পরিচালক ইমরানুর রহমান, শাওন ইসলাম, নুসরাত বারি আশা, মহিউদ্দিন রুবেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।