বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে এই তালিকা করা হচ্ছে। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে নাম তালিকাভুক্ত করাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতার পাশাপাশি মার্কেটের জায়গা বুঝে পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আজ বুধবার বেলা একটার দিকে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের পাশের রাস্তায় যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচে অস্থায়ী বুথ বসিয়ে নাম নিবন্ধনের এই কাজ শুরু করে বঙ্গবাজারের বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতি। সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তাঁরা সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন। দুপুরের দিকে তালিকার কাজ করা শুরু হয়।
অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে তালিকা প্রস্ততকারীদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা আদর্শ হকার্স মার্কেট, মহানগরী, বঙ্গ ও গুলিস্তান—এই চার অংশের ব্যবসায়ীরা পৃথক সারিতে দাঁড়িয়ে নাম নিবন্ধনের কাজ করছেন। নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য অনেককে হুড়োহুড়িও করতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবকিছু তো শেষ। এখন যদি কোন সাহায্য সত্যিই আসে, তাহলে নাম নিবন্ধন করতে না পারলে তা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হতে পারেন। সেজন্য সবাই চেষ্টা করছেন, যাতে কোনোভাবেই নাম বাদ না যায়। ব্যবসায়ীর নাম এবং মোবাইল নম্বরের সঙ্গে তালিকাভুক্তির সময় দোকানের নম্বর ও ভিজিটিং কার্ডও চাইছেন তালিকা তৈরির কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী দোকানের ভিজিটিং কার্ড দেখাতে পারেননি। বলছেন, সবই পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
মহানগরী মার্কেটের মাইমুনা গার্মেন্টসের মালিক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মার্কেটের ছোট ব্যবসায়ীদের একজন আমি। আমারও পাঁচ লাখ টাকার মালামাল পুড়েছে। ঈদ উপলক্ষে বাকিতে মালামাল দিয়েছিলাম ১০ লাখের মতো। ওই খাতাও নেই। সম্পদ বলতে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তালিকায় নাম লেখাতে এসেছি। দেখি কোনো সাহায্য–সহযোগিতা পাই কি না।’
একই মার্কেটের আল মদিনা গার্মেন্টসের মালিক নেয়ামাত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেড় বছরের মতো হলো ব্যবসাটা শুরু করেছিলাম। ভালোই চলছিল। কত স্বপ্ন ছিল ব্যবসা নিয়ে। একনিমেষেই সব শেষ হয়ে গেল। সাহায্যের জন্য নাম লেখাতে হবে, এমন কখনো ভাবিনি৷ অথচ বাস্তবতা আমাকে সেখানেই নিয়ে এসেছে।’
বঙ্গ মার্কেটের তালিকা যেখানে করা হচ্ছে, সেখানেও দেখা গেল লম্বা সারি। নাম লেখাতে ঘণ্টাখানেক ধরে সারিতে অপেক্ষা করছেন, এ কথা উল্লেখ করে মুনতাহা ফ্যাশনের জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তালিকা করা হচ্ছে এটা একটা ইতিবাচক দিক। তবে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণসহ এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবাজারে লাগা আগুন প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। ব্যবসায়ীরা জানান, আদর্শ হকার্স মার্কেট, মহানগরী, বঙ্গ ও গুলিস্তান—এই চার অংশ মিলেই বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স। প্রায় ২২ হাজার বর্গ ফুটের এই মার্কেটে ৫ হাজারের বেশি ছোট-বড় দোকান রয়েছে। ইতিমধ্যে সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সকে চার বছর আগেই অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল। তখন ফায়ার সার্ভিস থেকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে বেশ কিছু ব্যানারও টাঙানো হয়েছিল।
সবাই জানত এই কমপ্লেক্স বড় ধরনের অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু এরপর সরকারের অন্য কোনো সংস্থা কিংবা বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের দোকানমালিকেরা অগ্নিঝুঁকি প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
উল্লেখ্য, বঙ্গবাজার মার্কেটে এর আগেও কমপক্ষে তিনবার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুরো বিপণিবিতান পুড়ে যায়। এ ছাড়া ২০১৮ সালেও একবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।