আলু আমদানির বিপক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয়

সরকার প্রতি কেজি আলুর দাম হিমাগারে ২৬-২৭ টাকা ও খুচরায় ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তা কোথাও কার্যকর হয়নি।

আলু আমদানির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়

বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সীমিত পরিসরে আলু আমদানির সুপারিশ করেছে। কিন্তু এর বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, আমদানির প্রশ্নই ওঠে না। দেশে এখনো যে আলু আছে, তা দিয়ে আরও দুই মাস চলবে। আর নভেম্বরে আগাম আলু বাজারে উঠতে শুরু করবে।

দেশে কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি দেওয়া হলেও আলুর ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি দরকার হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার কয়েকটি এলাকায় আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জায়গাতেই আলু তুলে বাজারে আনার প্রস্তুতি চলছে। তবে আগাম জাতের আলু পুরোদমে বাজারে উঠবে নভেম্বরে। এরপর অন্যান্য জেলার আলু ওঠা শুরু হবে। তাই আলু আমদানির দরকার নেই।  

আলু আমদানির অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দেশে যথেষ্ট পরিমাণে আলু আছে। বাজারে যাঁরা কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আগামী মাসে বাজারে নতুন আলু উঠবে।
আব্দুর রাজ্জাক, কৃষিমন্ত্রী

আগাম আলুর অবস্থা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রথম আলোর পক্ষে থেকে নীলফামারীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষকেরা এবার আগাম আলুর আবাদ বাড়িয়েছেন।  

এদিকে দেশে আলু চাষের জন্য প্রসিদ্ধ তিন জেলা—বগুড়া, জয়পুরহাট ও মুন্সিগঞ্জের আলুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় ভিন্ন তথ্য। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলি গ্রামের চাষি তরিকুল ইসলাম জানান, সেখানে প্রথম ধাপে আগাম আলু লাগানো শুরু হয়েছে, যা চলবে পুরো অক্টোবরজুড়ে। এই আলু বাজারে উঠবে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে। দ্বিতীয় ধাপে নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে ‘বিলম্বিত’ আলুর চাষ। এই আলু বাজারে উঠবে ফেব্রুয়ারিতে।

মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সেখানে আলুর আবাদ নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। আর আলু তোলা হয় মার্চ-এপ্রিলে।

আমদানির পক্ষে নন কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আলু আমদানির অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দেশে যথেষ্ট পরিমাণে আলু আছে। যাঁরা কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আগামী মাসে বাজারে নতুন আলু উঠবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর দাম বেঁধে দেয়। হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম সর্বোচ্চ নির্ধারণ করা হয় ২৬-২৭ টাকা। আর খুচরা বাজারের জন্য নির্ধারণ করা হয় ৩৫-৩৬ টাকা। কিন্তু বাস্তবে ওই দাম কোথাও নেই। বাজারে এখনো প্রতি কেজি আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা।

ভোক্তা অধিদপ্তরের সুপারিশ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ভোক্তা অধিদপ্তরের সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সীমিত আকারে আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া হিমাগার, ব্যাপারী, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যাঁরা অস্থিরতা তৈরি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন হিমাগারে অভিযান চালাচ্ছি। সরকার নির্ধারিত দামে যাতে আলু বিক্রি হয়, সে জন্য চেষ্টা করছি। তবে হিমাগারে যে আলু আছে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় আমরা আলু আমদানির অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করেছি।’

রপ্তানি কম হওয়ার পরও দাম বাড়তি

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এ বছর দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টন, যা চাহিদার তুলনায় ২৫ লাখ টন বেশি। সে জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি বছর ১ লাখ ২০ হাজার টন আলু রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে। যদিও এ বছর রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৩৬ হাজার টন। গত মাস থেকে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি হিসাবে, এখনো হিমাগার ও কৃষকের গুদামে ১৫ লাখ টন আলু আছে।

বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ গতকাল বলেন, ‘আমাদের হিমাগারগুলোতে ৮–১০ লাখ টন আলু মজুত আছে। এর বাইরে বড় কৃষক, মজুতদার ও ব্যবসায়ীদের কাছেও আলু আছে। এখনো যে আলু আছে, তা দিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যাবে। দেশে এই মুহূর্তে আলু আমদানির চেয়ে বাজার তদারকি করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে কি না, প্রশ্ন করলে মোস্তফা আজাদ বলেন, ‘হিমাগারে ব্যবসায়ীরা ভাড়ার বিনিময়ে আলু রাখেন। আমাদের এ ক্ষেত্রে দামের ওপর হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। শুনেছি, ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু নেওয়ার সময় প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৪ টাকা দাম রাখেন।’