মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছে দেশের শীর্ষ ছয় ব্যবসায়ী সংগঠন। একই সঙ্গে লাখ লাখ বিপদগ্রস্ত মানুষ রক্ষায় জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে ইসরায়েলিদের হাতে ফিলিস্তিনি নাগরিক, নারী ও শিশুদের ওপর চালানো বর্বরোচিত গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো হলো ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই), ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স–বাংলাদেশ (আইসিসিবি), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই)।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চলা হামলা বন্ধে বড় অগ্রগতি হয়েছে। আজ বুধবার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা চার দিনের বেশি সময়ের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। কাতার এ প্রস্তাবে মধ্যস্থতা করেছে।
যৌথ বিবৃতিতে সই করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম, আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এমসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় এবং ডিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সামীর সাত্তার ও সিসিসিআইয়ের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ।
বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৪ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ হাজার ৭০০ জনের বেশি নাবালক ও নবজাতক শিশু। আল-শিফা হাসপাতাল এখন ফিলিস্তিনিদের কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকাজুড়ে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডকে একটি জাতির পদ্ধতিগত বিনাশ উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এমন ঘটনা মানবজাতির ইতিহাসে নেই।
বিবৃতিতে গাজায় হামলার ধরনকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ দাবি করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা বলেন, গণহত্যামূলক যুদ্ধের অংশ হিসেবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ব্যাপকভাবে বেসামরিক অবকাঠামো, আবাসিক ভবন, মসজিদ, স্কুল ও হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করছে ইসরায়েল।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলেছে, বেসামরিক বাড়িঘর ও অবকাঠামোর ইচ্ছাকৃত ও নিয়মতান্ত্রিক ধ্বংস ‘ডোমিসাইড’ নামে পরিচিত। এ ছাড়া খাবার পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রাখা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে নিষিদ্ধ। এ কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মানবিক দুর্ভোগের প্রতিকার ও সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত নিরপরাধ মানুষদের সুরক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
গাজায় ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বর্ধিত মানবিক বিরতির আহ্বান জানিয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্যের অনুপ্রবেশের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রচেষ্টাকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। এ ছাড়া সাংবাদিক ও সাহায্য সংস্থার কর্মীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি গাজার হাসপাতাল ও স্কুলের সুরক্ষার বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বিবৃতিতে আরও বলেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ফিলিস্তিনিদের আত্ম–সংকল্প, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন করে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন।