চকচক করলেই সোনা হয় না। তবে সোনা এখন আগের চেয়ে হয়তো বেশি উজ্জ্বল, বিশেষ করে বিনিয়োগকারীদের কাছে। চলতি বছর সোনার দাম কেবল বেড়েই চলেছে।
সিএনএন জানায়, ২০২৪ সালে সোনার দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৭৪৮ ডলারে উঠেছে। ফলে দেখা যায়, এ বছর সোনার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে একের পর এক রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার আধা পয়েন্ট কমানো, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনিশ্চয়তা—এসব কিছু সোনার দাম আকাশে তুলে দিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চীন, ভারত ও তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের জন্য পোয়াবারো হয়েছে কস্টকোর সোনা বিক্রির ব্যবসা। মার্কিন এই পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এক আউন্সের সোনার বার বিক্রি করছে, সুতরাং চাইলেই একজন ক্রেতা এই সোনার বার কিনে ঘরে রেখে দিতে পারেন এবং সুযোগ বুঝে তা বিক্রি করে দিতে পারেন।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ বাজার স্ট্র্যাটেজিস্ট জোসেফ কাভাটোনি বলেন, কস্টকোর এই সোনা বিক্রি একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য সোনা কেনা খুবই সহজ করে দিয়েছে। এতই সহজ যে তাঁরা যেন কোনো গৃহস্থালি পণ্য কিনছেন। সোনা কেনা এর আগে কখনোই এত সহজ ছিল না এবং এই বাজারে প্রবেশও এত সোজা ছিল না।
সাধারণত মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে একটা উপায় হিসেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করা হতো। এর মাধ্যমে ঝুঁকি কমত। চলতি বছর স্বর্ণ আরও চকচক করছে। তবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় জানা ও বিবেচনায় নিতে হয়।
কেন স্বর্ণে বিনিয়োগ করবেন
অনিশ্চয়তার মধ্যে ক্রেতারা সাধারণত সোনার বাজারে ছোটেন। তাঁরা মনে করেন, অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হলে শেয়ার, বন্ড কিংবা মুদ্রার চেয়ে সোনার দাম মোটামুটি স্থিতিশীল থাকবে। মার্কিন ব্যুরো অব লেবারের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সোনার দাম নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। বৃদ্ধির হার ছিল ১০১ শতাংশের বেশি।
জোসেফ কাভাটোনি বলেন, ‘ঝুঁকির দিনগুলোতে সোনা খুব কাজের জিনিস। বাজার যখন খুব উথালপাতাল আচরণ করে কিংবা বাজার যদি ঘটনাবহুল হয়, তখন সোনা সত্যিই চকচক করে।’
কীভাবে সোনা কেনা যায়
নতুন ক্রেতার জন্য মূল বিবেচ্য, তিনি আসলে কেন সোনা কিনতে চান। জোসেফ কাভাটোনির জিজ্ঞাসা হলো, তিনি কি বিনিয়োগ বহুমুখী করতে চান নাকি নিরাপদ বিনিয়োগ করতে চান। এরপরের বিবেচ্য হলো, বিনিয়োগকারী কি সোনাভিত্তিক কোনো আর্থিক পণ্যে বিনিয়োগ করবেন, নাকি তিনি ধাতু হিসেবে সোনা কিনতে চান।
ধাতু হিসেবে সোনা কিনলে কিছু বিষয় তখন বিবেচনায় নিতে হবে। সোনা কীভাবে সরবরাহ করা হবে, কোথায় রাখা হবে—এসব বিষয়। আরেকটি বিবেচনার বিষয় হলো, খুচরা বাজার থেকে সোনা কিনলে তার গায়ে লেখা দামের সঙ্গে স্পট মার্কেটে সোনার দামে পার্থক্য কী, সেটা জানা।
এখানেই শেষ নয়। একজন বিনিয়োগকারীকে জানতে হয়, তিনি যে সোনা কিনছেন, তা কতটা খাঁটি এবং এই সোনা কোথা থেকে এসেছে। সোনার অলংকার হলে তার দাম অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করে ডিজাইন এবং তা শিল্পগুণসম্পন্ন কি না, তার ওপর। এই দুই কারণে সোনার দাম অনেকটাই বেড়ে যায়।
অন্যদিকে সোনাভিত্তিক আর্থিক পণ্য এসব বিবেচনা থেকে একজন বিনিয়োগকারীকে মুক্তি দেয়। জোসেফ কাভাটোনির কথায়, ‘এটা অনেকটা শেয়ার কেনার মতো। এখন অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে, যেখানে আপনি কমিশন ছাড়াই এগুলো কিনতে পারবেন। সুতরাং এই বিনিয়োগে আপনি খুব কম অর্থ খরচ করেই ঢুকতে পারেন বা বের হতে পারেন।’