ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। তাতে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে চালের দাম ২ টাকা বেড়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
সাধারণত রোজায় চালের চাহিদা তেমন বাড়ে না। তাতে বাজারও স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু এবার রোজার মধ্যেই অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে চালের দাম বেড়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একবার চালের দাম বেড়েছিল। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে তখন দাম কিছুটা কমে আসে। দুই মাসের ব্যবধানে এখন চালের দাম আবার বাড়ল।
গতকাল সোমবার রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, কাঁঠালবাগান ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহখানেক আগে যে মোটা চালের (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫০–৫১ টাকা ছিল তা এখন ৫২–৫৩ টাকা। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম ও বিআর ২৮) কেজি ৫৫–৫৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৭–৫৮ টাকা। আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজিপ্রতি দাম ৬২–৭৮ টাকা থেকে বেড়ে ৬৪–৮০ টাকা হয়েছে। বাজারে কিছু সরু চাল অবশ্য আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কাঁঠালবাগান বাজারের চালের দোকান কুষ্টিয়া রাইস এজেন্সির বিক্রেতা আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। তবে রোজার বাজারে চাল সেভাবে মানুষ কেনেন না। তাই এ সময় মূল্যবৃদ্ধির কথা নয়।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনেকটা হঠাৎ করেই চালের দাম বেড়েছে। মোকামগুলোয় চালের দাম বাড়ার পর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই এখন বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। এ দফায় মোটা, মাঝারি ও সরু—সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, মিলমালিকেরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। আবার মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মান ও ধরনভেদে চালের দাম কেজিতে দুই টাকার মতো বেড়েছে। নতুন ফসল আসার আগে দাম কমার লক্ষণ দেখছেন না ব্যবসায়ীরা।
চালের দাম নিয়ে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, মিলগুলোর কাছে ধানের যে মজুত ছিল, তা প্রায় শেষ হয়ে আসছে। তাতে বাজারে একটি প্রভাব পড়েছে। তবে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। ফলে খুব বেশি মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নেই।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) ৫০-৫১ টাকা থেকে ৫২-৫৩ টাকা; মাঝারি মানের চাল (পাইজাম ও বিআর ২৮) ৫৫-৫৬ টাকা থেকে ৫৭-৫৮ টাকায় এবং সরু চাল (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) ৬২-৭৮ টাকা থেকে ৬৪-৮০ টাকায় উঠেছে।
মোকামের অবস্থা যেমন
কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে মিনিকেট ও বিআর ২৮ চালের দাম কেজিতে দুই টাকা করে দাম বাড়িয়েছেন চালকলের মালিকেরা। এক সপ্তাহ ধরে তারা এই দরে চাল বিক্রি করছেন। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাসমতী চালের দাম। এটির দাম কেজিতে ছয় টাকা বেড়েছে।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবদিন গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৫ বছরে রমজান মাসে কখনো চালের দাম বাড়েনি। এবারই ব্যতিক্রম। ধানের দাম কেন বাড়ল তা খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, চালের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নজরে এসেছে। আগামীকাল এ ব্যাপারে মিলমালিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে। বাজারে তদারকি বাড়ানো হবে।
এদিকে নওগাঁর ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার বাজারে ধানের দাম মণপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন মিলাররা।’
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া ও প্রতিনিধি, নওগাঁ]