দেশে কালোটাকা ও পুঁজি পাচার ২ শতাংশ কমানো গেলে আরেকটি পদ্মা সেতুর অর্থায়ন হতে পারে। কিন্তু সরকার দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে বরং ১৫ শতাংশ করের মাধ্যমে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ দিচ্ছে। এর মাধ্যমে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে; যা কালোটাকার বিস্তার আরও বাড়াবে।
আজ শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। দুর্নীতি বন্ধ ও অর্থ পাচার রোধ বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে ইক্যুইটিবিডি নামে একটি বেসরকারি সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজনে ইক্যুইটিবিডির সঙ্গে আরও ছয়টি সমমনা সংগঠন সহযোগী হিসেবে ছিল। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, সিএসআরএল, এনডিএফ, সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলন, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা ও ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আহসানুল করিম। ইক্যুইটিবিডির প্রধান সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়কারী ইকবাল ফারুক, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এ এস এম বদরুল আলম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, এনডিএফের নির্বাহী পরিচালক ইবনুল সৈয়দ রানা ও ইআরএফের সহসাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা আয়কর ফাঁকি দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়ে দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দ্বিগুণ করা যাবে বা মাথাপিছু স্বাস্থ্য বরাদ্দের চার গুণ বাড়ানো সম্ভব; কিংবা কয়েকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বার্ষিক ভিত্তিতে সম্পদের বিবরণী দাখিল করার নিয়ম চালু করতে হবে। আর দুর্নীতি ধরা পড়লে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে জনগণের কল্যাণে যেসব ভর্তুকি বর্তমানে রয়েছে, তা কমানো উচিত হবে না; বরং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান বাড়াতে পানি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুতের মতো জীবন রক্ষাকারী সেবায় সরকারের উচিত আরও বেশি ভর্তুকি দেওয়া।
মূল বক্তব্যে কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আহসানুল করিম। এর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি বন্ধে একটি সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন গঠন করা, দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারীদের প্রতিবছর সম্পদ ও ব্যাংক বিবরণী জমার নিয়ম করা, জনসেবা খাতে ভর্তুকি কমানোর পরিবর্তে সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করা এবং অর্থ পাচার ও কালোটাকা বন্ধে একটি আন্তর্দেশীয় ব্যাংক স্বচ্ছতা চুক্তি চালু করা।