নির্বাচনের আগে মার্কিন অর্থনীতি চাঙা অবস্থায় আছে। তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমে আসা ও উল্লেখযোগ্য হারে মজুরি বৃদ্ধির ফলে ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে।
৫ নভেম্বরের নির্বাচনের এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হলো। জরিপে দেখা যাচ্ছে, কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ফলাফল যে কারও অনুকূলে যেতে পারে। খবর রয়টার্সের
অনেক নাগরিকের কাছে অর্থনীতি নির্বাচনের বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। খাদ্য ও বাসস্থানের পেছনে বাড়তি ব্যয় তাঁদের অসন্তোষের কারণ হয়ে উঠেছে। যদিও মন্দার পূর্বাভাস অগ্রাহ্য করে মার্কিন অর্থনীতি অনেক উন্নত অর্থনীতির তুলনায় ভালো করেছে।
কিন্তু রয়টার্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে, অর্থনীতি পরিচালনায় দক্ষতার প্রশ্নে ভোটাররা ট্রাম্পকে এগিয়ে রাখছেন।
ফেডারেল রিজার্ভ ২০২২ ও ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ালেও মার্কিন অর্থনীতি স্থিতিশীল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনের ঠিক আগের প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে আছে। কিছু মিশ্র প্রভাব থাকলেও অর্থনীতি গত চার বছর আগের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে এবং স্থবির হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদদের ধারণা ছিল, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হবে বার্ষিক ৩ শতাংশ হারে। এপ্রিল-জুন সময়েও প্রবৃদ্ধির হির একই ছিল। যদিও বাস্তবে প্রবৃদ্ধি হলো তার চেয়ে কিছুটা কম।
জরিপ শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবারের তথ্যে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতি আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে আটলান্টা ফেড তাদের ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ নির্ধারণ করে। শেষমেশ তাদের পূর্বাভাসই সত্য হলো।
বাণিজ্যের এই ঘাটতির বৃদ্ধির প্রভাব জিডিপিতে আছে। তা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি মন্দ হয়নি। ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তাদের বিবেচনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে মূল্যস্ফীতি তেমন একটা বাড়ে না। প্রকৃত প্রবৃদ্ধি তার চেয়ে বেশি হয়েছে। অর্থাৎ অর্থনীতি পূর্বধারণার চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছে।
এই সংশোধন প্রক্রিয়ায় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও মোট দেশজ আয়ের (জিডিআই) মধ্যকার ফারাক প্রায় মুছে গেছে। জিডিআই প্রবৃদ্ধির বিকল্প পরিমাপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করতেন, এই ফারাকের অর্থ হলো, অর্থনীতি ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে।
এদিকে মূল্যস্ফীতির হার ফেডের ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার কাছে চলে এসেছে। ফলে ফেডও মুদ্রানীতির লাগাম ছাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে নীতি সুদ কমানো হয়েছে। ২০২০ সালের পর এটি ছিল সুদের হার হ্রাসের প্রথম ঘটনা। ফেডের নীতি সুদহার এখন ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে চলে এসেছে।
কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, অর্থনীতির স্থিতিশীলতা থেকে বোঝা যায়, মুদ্রানীতি অতটা কঠোর ছিল না, যতটা মানুষ ভাবত। একই সঙ্গে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মজুরি বৃদ্ধির প্রভাব পড়েনি।
শ্রমবাজারের গতি কিছুটা কমেছে, শ্রমিক ছাঁটাই ঐতিহাসিকভাবে কম, মজুরিও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। শেয়ারবাজারের উত্থান ও বাড়ির মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবারের নিট সম্পদ বেড়েছে। মানুষের সঞ্চয়ের হার ভালো। মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় পরিবারগুলোর জন্য, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য তা স্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি পরিমাপের আরেকটি মানদণ্ড ব্যক্তিগত ব্যয় সূচকের (পিসিই) ২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে; দ্বিতীয় প্রান্তিকে যা ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ।
বোস্টন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ব্রায়ান বেথুন রয়টার্সকে বলেন, ‘যখন আমরা মূল্যহ্রাসের চক্রে প্রবেশ করেছি, তখন মজুরি বাড়ছে; সে জন্য প্রকৃত মজুরি বাড়ছে।’ বেথুন আরও বলেন, এটি অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্বিতীয় বিষয় হলো বাড়ির মূল্য; এটা কিছুটা স্থির হয়েছে, তৃতীয় বিষয়টি হলো শেয়ারবাজার।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা গেলে বা শ্রমবাজারে কিছুটা চাঙা ভাব থাকে, তাহলে ফেডারেল রিজার্ভ আগে যে পরিকল্পনা করেছিল, সে হারে নীতি সুদ না কমালেও চলবে।