২০২৩ সালের শেষেও বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের উৎস হিসেবে যথারীতি যুক্তরাষ্ট্রই শীর্ষে থাকবে।
চলতি বছর শেষে প্রবাসী আয়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
২০২২ সালে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে নেতিবাচক ধারা থাকলেও এ বছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, দেশের প্রবাসী আয়ে এখন ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ বছরের শেষে আনুষ্ঠানিক তথা বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশের মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংক ও নোমাডের মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ ৩৯-এ বলা হয়েছে, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ ২০২৩ সালের শেষেও সপ্তম স্থানে থাকবে। এই তালিকায় যথারীতি সবার ওপরে থাকবে ভারত। চলতি বছর দেশটির প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১২৫ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
নোমাড ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর বাংলাদেশের মতো শ্রীলঙ্কারও প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তাবলি পালনের কারণে দেশীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের আস্থা ফেরায় প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
প্রতিবেদন মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শ্রমবাজারের চাঙাভাব, উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমার কারণে প্রবাসী আয়প্রবাহ বাড়বে। তবে সৌদি আরব ও কুয়েতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রীতিমতো ধস নামার কারণে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশে গত নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি।
চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯ দশমিক ৯২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৯২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। ফলে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষে প্রবাসী আয় ২৩ বিলিয়ন থেকে ৩০৭ কোটি ডলার আরও প্রয়োজন, যেটাকে কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রবাসী আয়ে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেওয়ার ফলে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের আয় পাঠানো বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংক–নোমাডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর শেষে বিশ্বব্যাপী মোট প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়াবে ৮৬০ বিলিয়ন বা ৮৬ হাজার কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি। তবে দেশভিত্তিতে প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে মেক্সিকো, সে দেশ মোট ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় পেতে পারে। ৫ হাজার কোটি ডলারের প্রবাসী আয় নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকবে চীন। চতুর্থ স্থানে থাকবে ফিলিপাইনস, তারা পাবে ৪ হাজার কোটি ডলার।
মিসর ও পাকিস্তান উভয় দেশই ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার যথাক্রমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে থাকবে। সপ্তম স্থানে থাকবে বাংলাদেশ। নাইজেরিয়া, গুয়েতেমালা ও উজবেকিস্তান যথাক্রমে ২ হাজার ১০০ কোটি, ২ হাজার কোটি ও ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় নিয়ে অষ্টম, নবম ও দশম স্থানে থাকবে।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় পাবে নেপাল। দেশটির এ বছরের শেষে দেশটির প্রবাসী আয় দাঁড়াবে জিডিপির ২৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে এই অনুপাত হবে ৭ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে ভারত সবার ওপরে থাকলেও জিডিপির অনুপাতে তা হবে মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ব্যবস্থার কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বাড়লেও এই বৃদ্ধির হার একই থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মূলত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করায় অনানুষ্ঠানিক বাজার তৈরি হয়েছে।
অনানুষ্ঠানিক বাজারে ডলারের দর বেশি থাকায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলের পরিবর্তে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে আয় বেশি পাঠান বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ভালো হলেও তেলের দাম কমে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসীদের নতুন কর্মসংস্থান খুব বেশি হবে না।
সে কারণে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হবে না। ২০২৪ সালেও বাংলাদেশে প্রবাসী আয় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, অর্থাৎ সমানই থাকবে।
বৈশ্বিক সংস্থাটির মতে, শ্রীলঙ্কার প্রবাসী আয়ে দুই বছর বড় পতন হলেও চলতি বছর ও ২০২৪ সালে তা বাড়বে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষেও বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের উৎস হিসেবে যথারীতি যুক্তরাষ্ট্রই শীর্ষে থাকবে। দ্বিতীয় স্থানে থাকবে সৌদি আরব। এ ছাড়া গালফ কো অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) বেশ কয়েকটি দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবাসী আসছে।
২০২৩ সালের শেষে বিশ্বের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৬৯ বিলিয়ন বা ৬৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। মূলত দক্ষিণ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হবে।
অন্যদিকে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ২০২১ সালের পর থেকে তেমন একটা বাড়েনি।