অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট বাস্তবায়নে নানামুখী সমস্যা দেখতে পাচ্ছে। বাজেটে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য যে বরাদ্দ রয়েছে, তা থেকে প্রতি মাসে নিজেদের বেতন-ভাতাই তারা ঠিকমতো নিচ্ছে। কিন্তু রাজস্ব সংগ্রহসহ অন্য সব কাজে তাদের গতি শ্লথ। এতে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না এবং বছর শেষে সরকারকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হয়। এর বিপরীতে গুনতে হয় বড় অঙ্কের সুদ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৬০ জন সচিব এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের উদ্দেশে গত বৃহস্পতিবার পাঠানো এক চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এসব কথা বলেছে।
চিঠিতে বাজেটে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন, রাজস্ব সংগ্রহ ও ব্যয় পরিকল্পনা এবং বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনার কথা আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, প্রতিবারের মতো চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেও কিছু কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট ও সময়নিষ্ঠ পরিকল্পনা দরকার। আগের বছরগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে, অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাস্তবায়ন ধীরগতিতে চলে। শুরুর দিকে রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রেও দেখা যায় ধীরগতি।
অর্থ বিভাগের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়। যেমন চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে । এর মধ্যে জুলাইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, অথচ আদায় হয়েছে ১৭ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম মাসে ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, আগের অর্থবছরের রাজস্ব সমন্বয় হতে হতেই শুরুর দিকের কয়েক মাস চলে যায়। বর্ষাকালে খুব কাজ হয় না, আদায়ও কম হয়। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ সময়টাও চলে গেছে এখন নভেম্বরে। এগুলোও শুরুর দিকে ভালো রাজস্ব সংগ্রহ না হওয়ার অন্যতম কারণ।
অর্থ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। আর সবাই ইউটিলিটি বা উপযোগ সেবার বিল পরিশোধ, নির্মাণ ও পূর্তকাজ এবং মালামাল ক্রয়—এসব পদক্ষেপ নেয় বছরের শেষ দিকে। এতে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান বজায় রাখা থাকে না।
অর্থ বিভাগ বলেছে, বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ সমানভাবে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে রাখা উচিত এবং এ ক্ষেত্রে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। আর প্রতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে আগের মাসের সব ইউটিলিটি বা উপযোগ সেবার বিল পরিশোধ করতে হবে। মেরামত ও সংরক্ষণকাজ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিক থেকে। পরের ত্রৈমাসিকগুলোতেও এমনভাবে বিলের টাকা রাখতে হবে, যাতে ঠিকাদারদের পাওনা ভালোভাবে পরিশোধ করা যায় এবং শেষ ত্রৈমাসিকে মাত্রাতিরিক্ত বিল পরিশোধের চাপ সৃষ্টি না হয়। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় পণ্য ও সেবা কেনার জন্যও থাকতে হবে যথাযথ পরিকল্পনা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ে সব দপ্তরকে বাজেট বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ তথা তদারকি করতে হবে। এরপর প্রতিবেদন তৈরি করে তা বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটিতে পাঠাতে হবে। এ কমিটি অনুমোদন দিলে প্রত্যেক প্রান্তিক শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠানো হবে অর্থ বিভাগে।
জানতে চাইলে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঠিকঠাক দায়িত্ব পালনের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর উদ্দেশে প্রতিবছরই অর্থ বিভাগ এ ধরনের চিঠি পাঠিয়ে তাগাদা দেয়। এতে কাজও হয়। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলার অভাবে প্রতিবছর সরকারকে বড় অঙ্কের সুদ ব্যয় করতে হয়।