বৃহস্পতিবার সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন থেকেই আগ্রহীরা যুক্ত হতে পারবেন পেনশন কর্মসূচিতে।
সরকার সর্বজনীন যে পেনশন কর্মসূচি বা স্কিম চালু করছে, তাতে ১৮ বছর বয়সে যে কর্মসূচিকে যুক্ত হবেন, তিনিই পাবেন সর্বোচ্চ সুবিধা। আপাতত সরকার চার ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালু করছে। এ চার ধরনের কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ জমার সুযোগ রাখা হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। প্রবাসী বাংলাদেশিরা মাসে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে পেনশন সুবিধার আওতায় আসতে পারবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গতকাল সোমবার ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩’ জারি করেছে। সেখানে কোন শ্রেণির মানুষ, কোন ধরনের পেনশনে মাসে কত টাকা জমা দিয়ে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে মাসে কত টাকা করে পাবেন, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, আপাতত চার ধরনের কর্মসূচি চালু করা হবে। সেগুলো হচ্ছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা।
এর মধ্যে প্রবাস কর্মসূচি হচ্ছে প্রবাসীদের জন্য, প্রগতি কর্মসূচি হচ্ছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য, সুরক্ষা স্কিম হচ্ছে অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য আর সমতা স্কিম হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য।
আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করবেন। গণভবন; গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর জেলা এবং সৌদির আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রান্ত থেকে এ স্কিমের উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়েছে অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ‘ইউপেনশন’ নামক ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করা হবে এবং এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ওই দিন থেকেই যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক পেনশন কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন। এর বাইরে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও যেকোনো ধরনের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য পেনশন কর্মসূচিটি কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তাঁরা পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধিত হতে পারবেন। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি নিয়ে সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন যাঁরা, তাঁরাও পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় তাঁরা যে সুবিধা ভোগ করে থাকেন, তা তাঁদের বাদ দিতে হবে।
দেশে বা বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকেরা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে পারবেন। সেই আবেদনের বিপরীতে একটি ইউনিক আইডেনটিটি নম্বর (ইউআইডি) দেওয়া হবে। আবেদনে উল্লেখ থাকা আবেদনকারীর মুঠোফোন নম্বর এবং অনিবাসীদের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই–মেইলের মাধ্যমে ইউআইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা দেওয়ার তারিখ জানানো হবে।
সরকার ঘোষিত চার ধরনের পেনশন কর্মসূচির মধ্যে প্রবাস কর্মসূচিতে ১৮ বছর বয়সী একজন প্রবাসী যদি মাসে ১০ হাজার টাকা করে জমা দেন, তবে ৪২ বছর পর তিনি মাসে পাবেন ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা করে। আবার ১৮ বছর বয়সী বেসরকারি কোনো চাকরিজীবী যদি মাসে ৫ হাজার টাকা করে জমা দেন, তাহলে তিনি ৪২ বছর পর মাসে পাবেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে। সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায়ও ১৮ বছর বয়সীরা কেউ যদি ৫ হাজার টাকা করে মাসে জমা দিয়ে পেনশনে যুক্ত হন, তাহলে ৪২ বছর শেষে তিনিও মাসে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে পাবেন।
তবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নির্ধারিত সমতা পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মাসিক চাঁদার অর্ধেক দেবে সরকার। সমতা কর্মসূচিতে একজন অংশগ্রহণকারীকে মাসে দিতে হবে ৫০০ টাকা, এর বিপরীতে সরকার দেবে আরও ৫০০ টাকা। এভাবে কেউ যদি ৪২ বছর ১ হাজার টাকা করে জমা দেন, তাহলে মেয়াদ শেষে তিনি মাসে পেনশন পাবেন ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, পেনশনের চাঁদা জমা দিতে হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে। আর জমা দেওয়া যাবে অনলাইন ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান এবং তফসিলি ব্যাংকের যেকোনো শাখার মাধ্যমে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাঁদা দিতে না পারলে পরের এক মাসের মধ্যে জরিমানা ছাড়া চাঁদা দেওয়া যাবে। এক মাস পার হলে পরের প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে হিসাব সচল করা যাবে। মাসের নাম উল্লেখ করে অগ্রিম চাঁদা দেওয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছে। চাঁদা মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে দেওয়ারও সুযোগ থাকবে।
চাঁদাদাতা নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহনির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিয়ের ব্যয় মেটাতে তাঁর জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন, যা শোধ করতে হবে ২৪ কিস্তিতে।