আগামীকাল বৃহস্পতিবারের সরকারি ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি। পর্যটকেরা ছুটছেন পর্যটন এলাকাগুলোতে।
দেশের বড় দুটি পর্যটন গন্তব্যের একটি সমুদ্রপাড়ের কক্সবাজার, অন্যটি টিলা ও চা-বাগানে ঘেরা বৃহত্তর সিলেট। সাপ্তাহিক দুই দিনের ছুটির সঙ্গে যোগ হয়েছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি। তিন দিনের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা ছুটবেন দেশের বড় এই দুটি পর্যটন এলাকায়।
এরই মধ্যে কক্সবাজার ও সিলেটের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের অধিকাংশ কক্ষ অগ্রিম ভাড়া বা বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্টের ভাড়াও। কক্সবাজার ও সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৮, ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর সামনে রেখে পর্যটকেরা মাসখানেক আগে থেকে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের কক্ষ ভাড়া বা অগ্রিম বুকিং নেওয়া শুরু করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৮০ শতাংশের মতো কক্ষ অগ্রিম ভাড়া হয়ে গেছে। কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় হোটেল-মোটেলে সাধারণত লক্ষাধিক পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বিশেষ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে দেড় লাখের মতো পর্যটক রাতযাপনের সুযোগ পান। স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে আসা একেকজন পর্যটক থাকা, খাওয়া, ঘোরাঘুরি ও কেনাকাটা মিলিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা খরচ করেন। তাতে ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পর্যটক থাকলে দৈনিক ১০০ থোকে ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এবার তুলনামূলক কম খরচের মধ্যে কক্ষ চাইছেন পর্যটকেরা। হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসের ৮০ শতাংশ রুম (কক্ষ) বুকিং হয়ে গেছে।
কক্সবাজারে ছোট ও মাঝারি মানের হোটেল কিংবা রেস্টহাউসের একটা কক্ষের ভাড়া ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। মাঝারি মানের হোটেলে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া দুই হাজার টাকা থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে। আর একটু ভালো মানের হোটেলে এক রাতের জন্য একটা কক্ষ নিতে এ সময়ে পর্যটকদের জন্য গুনতে হবে পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা। সুযোগ-সুবিধার বিবেচনায় ১০ হাজার কিংবা তার চেয়ে বেশি ভাড়া গুনতে হবে তারকা মানের হোটেলে। তবে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে হোটেল-মোটেলের ভাড়াও বেড়ে যায়।
কক্সবাজারের সুগন্ধা এলাকার হোটেল ওয়েসিস ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাপ বেশি থাকলেও নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে বাড়তি কোনো মাশুল রাখা হচ্ছে না। তিন দিনের এ ছুটিতে আমাদের হোটেলের সব কক্ষ অগ্রিম ভাড়া হয়ে গেছে।’
দেশের ভেতরে বেড়ানোর জন্য ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের পরই পছন্দের তালিকায় আছে সিলেট। তিন দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে এ বিভাগের চার জেলার কয়েক শ হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের ৯০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। সিলেট বিভাগে পর্যটনে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সুনামগঞ্জের হাওর। হাওরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আধুনিক পর্যটনসুবিধা। এ কারণে তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের একটি বড় অংশই এবার ছুটছেন হাওরদর্শনে।
পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা তিন দিনের এই ছুটিতে হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহনসহ সিলেটের পর্যটনসংশ্লিষ্ট নানা খাতে ব্যবসা হবে অন্তত ১০০ কোটি টাকার।
সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, শহরের বাইরে যেসব হোটেল বা রিসোর্ট আছে, তার শতভাগ ইতিমধ্যে অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। শহরের মধ্যে কিছু হোটেলে সীমিতসংখ্যক কক্ষ এখনো ফাঁকা আছে। তবে যেভাবে পর্যটকদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তাতে ব্যবসায়ীরা এবার ভালো ব্যবসা করতে পারবেন।
ঢাকা থেকে যেসব পর্যটক কক্সবাজার ও সিলেটে বেড়াতে যান, তাঁরা সড়কপথের পাশাপাশি আকাশপথেও ভ্রমণ করে থাকেন। এ কারণে এ ছুটি ঘিরে উড়োজাহাজের টিকিটেরও চাহিদা বেড়ে গেছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে টিকিটের চাপ বেশি থাকে। এবার তিন দিনের ছুটি একসঙ্গে হওয়ায় চাপটা আরও বেড়েছে।
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরকেন্দ্রিক পর্যটনে ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহ এখন সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে হাউস বোটে রাতযাপনের ব্যবস্থা হওয়ার পর থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে টাঙ্গুয়ায় হাওরে। টাঙ্গুয়ার হাওরে শতাধিক হাউস বোট জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে চলছে। এসব বোটে এক রাত থাকার জন্য জনপ্রতি সাড়ে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। একটি হাউস বোটে সাধারণত ১২ জন থেকে ২৫ জনের মতো পর্যটক রাত যাপন করতে পারেন।
জগতজ্যোতি হাউস বোটের মালিক অপু নজরুল প্রথম আলোকে বলেন, এ ছুটিতে ঘোরার জন্য হাউসবোট বেশ আগেভাগেই বুকিং হয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, আগামী অক্টোবরের সাপ্তাহিক ছুটিকে কেন্দ্র করেও অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি খায়রুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশের ক্ষতি না করে হাউসবোটকেন্দ্রিক পর্যটন বিকাশের জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে ব্যবসা করা হচ্ছে। তবে এখানকার পর্যটন স্পটগুলো যথাযথ সংরক্ষণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে আরও পদক্ষেপ জরুরি।