বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী পদত্যাগ করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি লোক মারফত অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সন্ধ্যায় মোহাম্মদ জয়নুল বারীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আজ বিকেলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি।’
কেন পদত্যাগ করলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জয়নুল বারী বলেন, ‘আপনাদের তা অজানা থাকার কথা নয়।’
সাবেক সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারীকে ২০২২ সালের ১৫ জুন আইডিআরএ চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। তাঁকে তিন বছরের জন্য প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান করা হয়। সে অনুযায়ী তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ১৪ জুন।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত আইডিআরএর প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন এম শেফাক আহমেদ। তিনি তিন বছর করে দুই মেয়াদে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর নিয়মিত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী। তাঁর মেয়াদ শেষে তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান এম মোশারফ হোসেন। এক বছর নয় মাস কাজ করার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তাঁকে আর চায়নি বলে জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, বিমা খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে চেয়ারম্যানই পদক্ষেপ নিতে গেছেন, তিনিই বড় ধরনের বাধার মুখে পড়েছেন। ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে প্রথম চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক মামলা হয়েছিল, পরে যেগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে শফিকুর রহমান পাটোয়ারী প্রভাবশালী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে তাঁর মেয়াদ শেষ করেছেন।
মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স অবস্থান নিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আর সর্বশেষ জয়নুল বারীর পদত্যাগের দাবিতে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির লোকেরা একদিন তাঁকে ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। অথচ উল্লিখিত ডেল্টা লাইফ ও সোনালী লাইফের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই দুই কোম্পানির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত চলমান।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বর্তমানে কোনো সচিব নেই। সচিবের দায়িত্বে আছেন বিভাগটির অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডল। সোনালী লাইফের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে জয়নুল বারীকে পদত্যাগ করার পরিস্থিতি কেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তৈরি করল, এমন প্রশ্নের জবাবে অমল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, সোনালী লাইফের সঙ্গে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পদত্যাগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
সব মিলিয়ে ১৮৮ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে সোনালী লাইফের পর্ষদ ভেঙে দেয় জয়নুল বারীর নেতৃত্বাধীন আইডিআরএ। তিন মাস ধরে কোম্পানিটি চলছিল প্রশাসকের মাধ্যমে। ওই প্রশাসককে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন সোনালী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নেতৃত্বাধীন তাঁর পরিবারের সদস্যরা, যাঁরা সবাই বিমা কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক।
এদিকে সোনালী লাইফে আজ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে আইডিআরএ। সোনালী লাইফের করা রিট মামলাগুলো প্রত্যাহারের শর্তে এ কোম্পানিতে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক হবেন এবং গঠিত হবে অন্তর্বর্তী পর্ষদ। পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন আইডিআরএর সাবেক সদস্য মইনুল ইসলাম এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. জাফর ইকবাল।
জানা গেছে, আইডিআরএর এ পদক্ষেপেও সন্তুষ্ট নন সোনালী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা পর্ষদে ফিরতে চান, যদিও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।
মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে আজ রাতে ফোন দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভয়েস মেসেজ দিতে বলা হয়। মৌখিক বার্তায় রিট মামলা প্রত্যাহার ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।