পণ্য বিক্রয়কারী সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারকে ঠিকভাবে পণ্য দিচ্ছে কি না, তা সারা দেশে সরেজমিনে যাচাই করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
দেশের সব সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নে নিম্ন আয়ের পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য দেওয়ার তালিকা রয়েছে। এ তালিকা সংরক্ষিত আছে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কার্যালয়ে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের আট বিভাগে ৩৬ জন উপসচিব সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করবেন। সব উপসচিবই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তাঁদের কার্যক্রম তদারক করবেন একই মন্ত্রণালয়ের সাতজন অতিরিক্ত সচিব ও একজন যুগ্ম সচিব।
তালিকাভুক্ত ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি সাশ্রয়ী দামে পরিবারপ্রতি দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি বিক্রি করে আসছে। ভোজ্যতেল ১১০ টাকা লিটার, মসুর ডাল ৬৫ টাকা ও চিনি ৫৫ টাকা কেজি। টিসিবির গতকালের তথ্য অনুযায়ী বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১৮৫–১৯২ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল (মাঝারি) ১২০–১২৫ টাকা ও প্রতি কেজি চিনি ৮৮–৯০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, পরিদর্শনকারী উপসচিবেরা সিটি করপোরেশন ও ডিসি কার্যালয়ে থাকা তালিকা থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী বা উপকারভোগীদের নির্বাচন করবেন। প্রত্যেককে কমপক্ষে একটি উপজেলা, একটি পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ড সরেজমিনে পরিদর্শন করতে হবে।
ফ্যামিলি কার্ডধারীদের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে তাঁরা কার্ড পেয়েছেন, সাশ্রয়ী দামে পণ্য পেতে তাঁরা কোনো হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন কি না, নীতিমালা অনুযায়ী কার্ড পাওয়ার জন্য তাঁরা যোগ্য ব্যক্তি কি না—ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করতে হবে পরিদর্শকদের।
টিসিবির অনুমোদিত ডিলারদের স্থায়ী, অস্থায়ী বা নির্বাচিত জায়গা থেকে পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন কি না ও চলমান কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে কি না—এসব তথ্যও সংগ্রহ করবে পরিদর্শক দল। পরিদর্শকদের জরুরি ভিত্তিতে পরিদর্শন ও তথ্য সংগ্রহ শেষে তিন কার্যদিবসের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত মাসে ‘টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড পাওয়ার উপযুক্তদের মধ্যে ৩৯ শতাংশই তা পাননি।
বাদপড়াদের ৮০ শতাংশই মনে করেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তাঁরা তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের ঘুষ দিতে হয়েছে।
টিআইবির মতে, বাদ পড়ার পেছনে ফ্যামিলি কার্ড সম্পর্কে তথ্য না জানা, তালিকা তৈরিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি, সচ্ছল ব্যক্তি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়স্বজনদের কার্ড প্রদান, তদবির না থাকা ও রাজনৈতিক বিবেচনা—এগুলোই ছিল অন্যতম কারণ।