১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি

মূল্যস্ফীতি
প্রতীকী ছবি

খাদ্য মূল্যস্ফীতির লাগাম কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। তিন মাস ধরেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল সোমবার রাতে বিবিএস মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি হলো একধরনের করের মতো, যা ধনী-গরিবনির্বিশেষে সবার ওপর চাপ বাড়ায়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বেড়েছে। এখন বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। কখনো ডিমের দাম বাড়ে। আবার কখনো পেঁয়াজ, আলুর দাম বাড়ে। শাকসবজি, মাছ-মাংসের দামও বেশি।

খাদ্য মূল্যস্ফীতির চিত্রটি আরেকটু সহজ করে বলা যেতে পারে। গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে একজন মানুষের যদি চাল, ডাল, তেল, চিনি, মাছ-মাংসসহ যাবতীয় খাদ্যপণ্য কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়; তাহলে এ বছরের অক্টোবরে একই খাবার কিনতে তার খরচ হয়েছে ১১২ টাকা ৫৬ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খাবার কেনায় খরচ প্রতি ১০০ টাকায় বেড়েছে ১২ টাকা ৫৬ পয়সা।

২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এক দশকের মধ্যে গত আগস্ট মাসেই হঠাৎ করেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়। এরপর টানা তিন মাস ধরে তা ১২ শতাংশের বেশি রয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও ঝুঁকির মধ্যে চলে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত এক বছরে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা তেমন একটা কাজে আসেনি। যেমন ডিম আমদানি করার ঘোষণার অনেক দিন পর তা মাত্র দেশে এল। এ ছাড়া আগামী কয়েক মাস রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় আগামী দু–তিন মাস মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনা কম। এতে গরিব মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে।’

বিবিএস বলছে, শহর-গ্রামনির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় সমান। গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। শহরে এই হার কিছুটা বেড়ে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্যে দেখা গেছে, সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এ বছর মার্চ মাস থেকে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর আছে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মনে করেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে একটি আপৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাঁর মতে, আগামী দু-তিন মাস নীতিনির্ধারকেরা নানা ইস্যুতে ব্যস্ত থাকবেন। এ ছাড়া নীতি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তিনি বলেন, খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) পরিধি বাড়াতে হবে। সার্বিকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।