আগের সরকারের ভুল নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে না বলে মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এত দিন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব তথ্য দিয়েছে, সেসব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমি অর্থ মন্ত্রণালয়কে তথ্যপ্রবাহ সঠিক রাখার নির্দেশ দিয়েছি।’
আজ শনিবার ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক বিজনেস স্কুল আয়োজিত ‘বাংলাদেশে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার’ শীর্ষক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ফারজানা লালারুখ এবং ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন।
সংলাপে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই বলছেন, এত কিছু করার পরও মূল্যস্ফীতি কমছে না কেন। এর প্রধান কারণ, আগের সরকারের ভুল নীতি। এত দিন বিবিএসসহ অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব তথ্য দিয়েছে, সেসব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমি অর্থ মন্ত্রণালয়কে তথ্যপ্রবাহ সঠিক রাখার নির্দেশ দিয়েছি। সঠিক তথ্য না এলে অন্য তথ্যগুলোও ভুল আসবে। তখন যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করা যাবে না। এত দিন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ছিল না বলে এ সমস্যা হয়েছে। একের পর এক দুর্নীতি ও অন্যায় হয়েছে, যার মাশুল দিচ্ছেন দেশের জনগণ।’
সময়সাপেক্ষ হলেও দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যতের জন্য এমন নীতি করা হচ্ছে, যাতে কেউ আর অর্থ পাচার করতে না পারেন। তিনি বলেন, ১৫ বছরে অর্থনীতিতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার স্বল্পমেয়াদি সংস্কারকাজ চলছে। এরই মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। সবকিছু সঠিক পথে পরিচালনার জন্য নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাঁরা আসবেন, তাঁদের এ রাস্তা দিয়েই হাঁটতে হবে। তাহলেই শান্তি ফিরে আসবে। যদি আবার দুর্নীতি শুরু হয়, তাহলে জনগণ আবারও ফুঁসে উঠতে পারেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সমীক্ষা না করেই অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। একটি প্রকল্প থেকে কত টাকা আয় হবে, কত টাকা ব্যয় হবে, কত দিন সময় লাগবে এবং এসব প্রকল্পের বিপরীতে নেওয়া ঋণের সুদের হার কী হবে, এসব নিয়ে কোনো গবেষণা করা হয়নি। উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া হয়েছে।
সরকার পরিবর্তনের পরই একটি সংস্থা উচ্চ সুদে ঋণ দিতে চেয়েছিল বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, উচ্চ সুদের ঋণ নিলে আমরা পরিশোধ করতে পারব না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নরের (আব্দুর রউফ তালুকদার) ওপর শ্রদ্ধা রেখে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তিনি ৪২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে করতে ৩০ বিলিয়নে নিয়ে এলেন। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করতে তিনি তা করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ১২ বিলিয়ন ডলার নিঃশেষ করে তিনি এখন ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু কোথায় আছেন, জানি না। আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে নীতিগত দীর্ঘসূত্রতা পেয়েছি। যে কারণে কোনো কিছু পরিবর্তন করতে চাইলেই দ্রুত করা যায় না।’
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘উন্নয়নের যে বয়ান, তার ব্যবচ্ছেদ করতে না পারলে এগোনো সম্ভব নয়। প্রবৃদ্ধির যে চিত্র আমাদের দেওয়া হয়েছিল, তাতে তথ্য-উপাত্তের রাজনীতিকীকরণ ছিল। ফলে দেখা যাচ্ছে, জিডিপি বাড়ছে; কিন্তু বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ছে না।’ তিনি বলেন, ‘এত জিডিপি হচ্ছে, কিন্তু কর-জিডিপি বাড়েনি। অনেক বছর হলো, এটা ৮-৯ শতাংশে আটকে থাকল। এত টাকা কই গেল?’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন, আমরা কি মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছি? আমি মনে করি, আমরা এরই মধ্যে সেই ফাঁদে আছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের মেরামত করা না গেলে “দুই পয়সার সংস্কার” দিয়ে এগোনো যাবে না। এ জন্য প্রথমেই দরকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা।’