সদ্য বিদায়ী ২০২৩–২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে একমাত্র ভ্রমণ করেই সাফল্যের দেখা পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের মধ্যেই (জুলাই–এপ্রিল) ভ্রমণ কর আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে সংস্থাটি। আর জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে এই খাত থেকে আদায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে ভ্রমণ কর বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা।
ভ্রমণ কর আদায়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের পরিশ্রম করতে হয় না বললেই চলে। কারণ, বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রির সময়ই তারা ভ্রমণ কর কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে দেয়। স্থলপথের ভ্রমণ করও কর কর্মকর্তারা আদায় করেন না; সেটি হয় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে।
এনবিআর এখন পর্যন্ত বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসের রাজস্ব আদায়ের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, সংস্থাটি এ সময়ে সব মিলিয়ে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে। গত অর্থবছরে সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাস শেষে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি রয়েছে প্রায় সাড়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর এখন পর্যন্ত জুন মাসের আদায়ের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি। তাই অর্থবছর শেষে মোট কত রাজস্ব আদায় হয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া যায়নি।
* বিদায়ী অর্থবছরে ভ্রমণ কর আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। ১১ মাসের আদায় ১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।* সার্বিক রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের গত ১১ মাসের সার্বিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত অর্থবছরে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে গত মে মাসে। ওই মাসে সংস্থাটি মোট ৩৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে। জুন মাসেও যদি এ রকম রাজস্ব আদায় হয়, তারপরও বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে রাজস্ব আদায়ে।
আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট), আবগারি শুল্ক, লেনদেন কর, আয়কর ও ভ্রমণ কর বাবদ মোটাদাগে রাজস্ব আদায় করে থাকে এনবিআর। এর মধ্যে একমাত্র ভ্রমণ করেই এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে সংস্থাটি। অন্যান্য খাত থেকে গত ১১ মাসে আদায়ের যে চিত্র, তাতে অর্থবছর শেষে এসব খাতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ প্রায় অসম্ভব বলে জানান এনবিআরের কর্মকর্তারা।
ভ্রমণ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কারণ সম্পর্কে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত অর্থবছরে এ খাতে কর বাড়ানো হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে গত অর্থবছরে নতুন করে ভ্রমণ কর আরোপ করা হয়। করহার বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন করারোপের ফলে এ খাত থেকে আদায় বেড়েছে। এ ছাড়া দেশের মানুষের ভ্রমণ যত বাড়ে, এ খাত থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বিনা পরিশ্রমে রাজস্ব আদায়ও তত বাড়ে। কারণ, এই খাত থেকে কর আদায় একেবারেই সহজ। যেমন আকাশপথে দেশে ও দেশের বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভ্রমণদাতাদের কাছ থেকে বিমান সংস্থাগুলোই টিকিট বিক্রির সময় কর কেটে রাখে এবং সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। আর স্থলপথে বিদেশ ভ্রমণের বেলায় ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে কর আদায় করে থাকে। এ কাজ হয় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে।
বিদায়ী ২০২৩–২৪ অর্থবছরে আকাশপথে দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা করে ভ্রমণ কর আরোপ করা হয়। পাশাপাশি বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও করের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী সার্কভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের বেলায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকায় ভ্রমণ কর নির্ধারণ করা হয়েছিল। আকাশপথ ছাড়া স্থল ও সমুদ্রপথে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও কর বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা গত অর্থবছরের আগে ছিল ৫০০ টাকা।
গত অর্থবছরের ১১ মাসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ খাত থেকে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ কর আদায় হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে, যা পরিমাণে ২০৮ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০৭ কোটি টাকা আদায় হয় পরের মাস ডিসেম্বরে। আর সর্বনিম্ন ১০৬ কোটি টাকা আদায় হয় অর্থবছরের প্রথম মাসে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণত নভেম্বর–ডিসেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। তাই এ সময়ে মানুষ দেশে–বিদেশে বেশি ভ্রমণ করে। ফলে ভ্রমণ করের আদায় বাড়ে।