আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক

পেনশনের অর্থ সামাজিক খাতে আর দেখানো হবে না 

চাকরি শেষ করার পর সরকারি কর্মচারীরা যে পেনশন পান, তা-ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় বলে প্রতিবছর দেখিয়ে থাকে সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ ব্যয়কে সামাজিক নিরাপত্তার ব্যয় বলে মানতে নারাজ। বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের সময় দেওয়া আইএমএফের শর্তের মধ্যেও এ কথা রয়েছে। 

প্রথমবারের মতো সরকার সম্মত হয়েছে যে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মধ্যে এ ব্যয়কে দেখানো হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে গত বুধবার সচিবালয়ে আইএমএফের ঢাকা সফরকারী স্টাফ কনসালটেশন মিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে। 

মিশনটি গত মঙ্গলবার থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে, যা চলবে আগামী সপ্তাহেও। এ মিশন আগামী ২ মে পর্যন্ত থাকার কথা থাকলেও আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান ও মিশন চিফ রাহুল আনন্দ এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দু-এক দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ওয়াশিংটনে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার বৈঠক রয়েছে। এ বৈঠকে অংশ নিয়ে এসে পরে রাহুল আনন্দ ঢাকায় আসবেন বলে মিশনের মেয়াদ একটু বাড়ছে। 

সরকার চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ দেখিয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এ বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ হিসাবের মধ্যেই রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন বাবদ ২৮ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের সুদ সহায়তা বাবদ ৭ হাজার ৯০৭ কোটি টাকাও বরাদ্দ রয়েছে চলতি অর্থবছরে। আইএমএফ এ অঙ্ককেও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বাইরে রাখার কথা বলেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। 

ইউনেসকোর মতে, শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় জিডিপির ৬ শতাংশ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় ৫ শতাংশ থাকা উচিত। বাংলাদেশে এ হার শিক্ষা খাতে ২ শতাংশের কম ও স্বাস্থ্য খাতে ১ শতাংশের কম। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ভালো থাকবে কি না, আইএমএফ মূলত তা নিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। 

সরকার প্রতিবারই সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয়ের একটি বড় আকারের চিত্র দেখায়, বাস্তবে যা অনেক কম এমনকি অর্ধেকও হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত আইএমএফের মিশন চিফ রাহুল আনন্দ প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি সহজতর করতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে (বাংলাদেশ সরকারের) আরও অর্থ ব্যয় হওয়া দরকার।’ তবে আগামী তিন বছরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী। 

পেনশনের অঙ্ক বাদ দেওয়ার পরও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হবে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। 

এদিকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব এবং ইআরডির বিদেশি সহায়তাবিষয়ক বাজেট ও হিসাব (ফাবা) নামক উইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফের মিশন। 

জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লেনদেন পরিচালনায় আলাদা একটি হিসাব খোলা হয়েছে এবং এতে প্রকল্পটির লেনদেনে কোনো জটিলতা হবে না বলে আইএমএফের মিশনকে জানানো হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের লেনদেনের জটিলতা এড়াতে একটি কৌশলগত হিসাব খোলার শর্ত আইএমএফই দিয়েছিল। 

সচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের তথ্য জানতে চেয়েছেন মিশন সদস্যরা। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মধ্যে কোনো উন্নয়ন সহযোগীর ঋণের কিস্তি পরিশোধ বাকি আছে কি না, তা-ও জানতে চেয়েছেন বলে জানা গেছে। 

বৈঠক শেষে ইআরডি সচিব শরিফা খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইএমএফ আমাদের কাছে বৈদেশিক ঋণবিষয়ক তথ্যভান্ডার এবং তথ্যভান্ডার ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে জানতে চেয়েছে। বলেছি যে বাংলাদেশ জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) পদ্ধতি অনুসরণ করে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধ এখন পর্যন্ত ভালো (ক্লিয়ার) এবং এ ব্যাপারে কোনো ব্যর্থতা নেই বলেও মন্তব্য করেন শরিফা খান।