দেশে ডলার আসার আরেকটি উৎসেও টান পড়েছে। কয়েক মাস ধরে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ কমার পর এবার বিদেশি সহায়তার খাতটিও সেই পথ ধরেছে। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে আগের মতো আর বৈদেশিক সহায়তা ছাড় হচ্ছে না। যার কারণে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৯ কোটি ডলার কম ঋণসহায়তা এসেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কয়েক মাস ধরেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। তাতে বেড়ে গেছে আমদানি খরচ। ফলে পণ্য আমদানিতে এখন আগের চেয়ে বেশি ডলার লাগছে। এর ফলে রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে। রিজার্ভ কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের আশপাশে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রকল্প ও খাদ্যসহায়তা মিলে ১৩৫ কোটি ডলার দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১৯৪ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি সহায়তা কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশের মতো। তবে এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধের পরিমাণও কিছুটা কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে সাড়ে ৫২ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। গত বছর একই সময়ে সাড়ে ৫৯ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ।
সুদ ও আসল পরিশোধের পর গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বৈদেশিক সহায়তার নিট প্রাপ্তি হয়েছে সাড়ে ৮২ কোটি ডলার। অবশ্য সুদাসল পরিশোধ করা হয় সরকারের আরেকটি হিসাব থেকে। যার জন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকে। বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয় ডলারে। ফলে ঋণের সুদাসল পরিশোধও রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি করেছে।
তবে আশার কথা হলো, বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি বেড়েছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় সাড়ে ৪০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দাতা সংস্থা ও দেশগুলো। গত অর্থবছরে একই সময়ে প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ছিল মাত্র সাড়ে ৯ কোটি ডলার।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈদেশিক সহায়তা ছাড় কমে যাওয়া অবশ্যই রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিদেশি সহায়তার অর্থ দ্রুত ছাড় করার ব্যবস্থা নিতে হবে। তিন ধরনের বিদেশি সহায়তা ছাড়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। যেমন বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে বাজেট সহায়তা নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা ছাড় করা। এ ছাড়া প্রকল্পের অনুকূলে অনুমোদিত অর্থ দ্রুত ছাড়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার (এনজিও) বিদেশি অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।’
রপ্তানি ও প্রবাসী আয় হলো সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা ডলারের মজুত বাড়ানোর প্রধান উৎস। এখন মজুতের জোগানে টান পড়তে শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় সোয়া ৬ শতাংশ কমেছে। টানা ১৩ মাস রপ্তানি আয় বাড়তির দিকে ছিল, যা অর্থনীতিকে স্বস্তি দিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৭ শতাংশের মতো কমেছে।
তবে সার্বিক রপ্তানি আয় এখনো ইতিবাচক ধারায় আছে। অর্থবছরের তিন মাসের হিসাবে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে রপ্তানি আয় ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার হয়েছে।
অন্যদিকে বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কা এবং ডলার–সংকটের কারণে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ নিম্নমুখী হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ১৫৪ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, যা বিগত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত আগস্ট মাসে ২০৩ কোটি ডলার দেশে এসেছিল। গত অর্থবছরে প্রতি মাসে গড়ে ১৭৫ কোটি এসেছিল। সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয় সেই গড়ের নিচে নেমে গেল।