অধ্যাপক ম তামিম
অধ্যাপক ম তামিম

ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ ৩ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত দিতে হয়েছে: ম তামিম

জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম বলেছেন, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিদ্যুতের চাহিদার অতি উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ করে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়। একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত সক্ষমতা (ওভার ক্যাপাসিটি) তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে ক্যাপাসিটি পেমেন্টও বেড়েছে। সব মিলিয়ে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিয়েছে সরকার।

আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলনকক্ষে শ্বেতপত্র কমিটির সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ম তামিম। সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সব সদস্য সংক্ষেপে তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানান।

ম তামিম বলেন, ‘কাগজে-কলমে প্রমাণ রেখে কেউ চুরি করেনি। সে কারণে চুরির সঠিক পরিমাণ হিসাব করা কঠিন কাজ। তবে আমরা তথ্য-উপাত্ত থেকে যেটা দেখি, যা শ্বেতপত্র প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৩ বিলিয়ন বা ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিদ্যুৎ উৎপাদনে (জেনারেশনে) বিনিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। সে হিসাবে এসব প্রকল্প দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার হাতবদল হয়েছে।’

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ছাড়া প্রকল্প দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ম তামিম বলেন, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেওয়া হলেও যিনি প্রকল্প পেয়েছেন, তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে। হাতেনাতে প্রমাণ নেই; কিন্তু অনেক জায়গা থেকে সম্পর্কিত নথিপত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রয়োজনের চেয়েও বিদ্যুতের চাহিদার অনেক বেশি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ম তামিম। ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৭ হাজার মেগাওয়াট ইভিনিং পিক লোড আসবে। সেই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪০ মেগাওয়াট করা হয়। এভাবে অতি উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ করে তারা ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র দেওয়া শুরু করে। সে কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অতিরিক্ত সক্ষমতা (ওভার ক্যাপাসিটি) তৈরি হয়েছে, ক্যাপাসিটি পেমেন্টও বেড়েছে। এতে সব মিলিয়ে অতিরিক্ত ৩০০ কোটি ডলার ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ দেওয়া হয়েছে।’

এই ঘটনা তথ্য-উপাত্তের বিকৃতির বড় উদাহরণ বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আপনি (সরকার) ইচ্ছা করে এমন একটি প্রাক্কলন করলেন, যে প্রাক্কলন দেশের প্রয়োজনের সঙ্গে মেলে না। তারপর আপনি সেই প্রাক্কলন কার্যকর করতে এমন বিনিয়োগ করলেন, যেখানে চুরি-বাটপারি করার সুযোগ ষোলো আনা।’