দেশে গত তিন দশকে নাগরিকদের মৌলিক শিক্ষা অর্জনে অনেক উন্নতি হয়েছে। বেড়েছে কর্মসংস্থান। তবে এসব সূচকে সংখ্যাগত উন্নতি হলেও মানের দিক এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে কর্মসংস্থানের পরিমাণ বাড়লেও আয়ের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য রয়েছে, তা খুব একটা কমেনি। অবশ্য বাংলাদেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশেই এমন পরিস্থিতি চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ১১তম দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক পলিসি নেটওয়ার্ক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্বব্যাংক, সাউথ এশিয়া ইকোনমিক পলিসি নেটওয়ার্ক ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গর্ভন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইজিডি) যৌথভাবে দুই দিনের এ সম্মেলন আয়োজন করে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের শেষ অধিবেশনে দক্ষিণ এশিয়ায় সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা নিয়ে প্যানেল আলোচনা হয়। তে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবদুল বাকী বলেন, সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে বড় ধরনের পেশাগত বৈষম্য রয়েছে। এটি কমাতে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এখনো অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে অতিদারিদ্র্য প্রবণ এলাকা ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছানো জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যানস টিমার বলেন, সুযোগের সমতা না থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার অনেক লোক তাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারছে না। ফলে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। এই অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, মৌলিক শিক্ষায় অনেক অগ্রগতি হলেও মানুষের আয় ও ভোগের ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন কম দেখা যায়। সামাজিক সমতা বাস্তবায়নে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অভিজাতরা সক্রিয় না হলে সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
মূল প্রবন্ধে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মুখ্য অর্থনীতিবিদ মরিজিও বুসোলো বলেন, গত তিন দশকে দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে উল্লেখযোগ্য টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাতে দারিদ্র্যও অনেক কমেছে। কিন্তু অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক অগ্রগতি হয়নি। অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বৈষম্য রয়ে গেছে। জনসাধারণের মধ্যে সুযোগের সমতার অভাব রয়েছে। শ্রমবাজারে আয়ের ক্ষেত্রে পেশা, স্থান ও নারী-পুরুষভেদে বৈষম্য রয়েছে। এসব বৈষম্য কমিয়ে আনা প্রয়োজন।
মরিজিও বুসোলো আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আন্তপ্রজন্ম গতিশীলতাও কম রয়েছে। বিশেষ করে শহর এলাকায় বসবাসকারীরা গ্রামীণ মানুষের তুলনায় বেশি সুবিধা পান। ফলে শহরে জন্মগ্রহণ করা কোনো সন্তান তার নিজের পিতামাতার চেয়ে আরও এগিয়ে যেতে পারেন।
মৌলিক শিক্ষার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভালো করেছে মত দেন মরিজিও বুসোলো। বলেন, শিক্ষার হার সংখ্যায় বৃদ্ধি পেলেও মানের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এই অঞ্চলে শিক্ষা খাতে গড় বরাদ্দ জিডিপির ৩ শতাংশেরও কম। এটি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের গবেষণা সংস্থা কলেকটিভ ফর সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চের পরিচালক হারিস গাজদার বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য লিঙ্গসমতা জরুরি। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বেশ ভালো করছে। তবে গ্রামীণ পর্যায়ে নারীরা এখনো বেশ বঞ্চিত। পাকিস্তানেও একই অবস্থা রয়েছে।
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, ‘শিক্ষা, পেশা ও আয়—এই তিন ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে কাজ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কর্মজীবী মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু পেশা ও আয়ের পরিমাণে অনেক বৈষম্য রয়েছে। বিভিন্ন সূচকে আমাদের সংখ্যাগত উন্নতি হয়েছে। তবে মানের দিক পিছিয়ে আছি। এই জায়গায় কাজ করতে হবে।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, দেশে দারিদ্র্য কমলেও মানুষের সামাজিক অবস্থানের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এখন একজন রিকশাচালকের ছেলে রিকশাচালক হবেন—এমনটা হয়তো আশা করি না। কিন্তু রিকশাচালকের সন্তানেরা চাকরির বাজারে সমান সুযোগ পান না।
সমাজে সমতা আনতে মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরি বলে মনে করেন শাহীন আনাম। তিনি বলেন, দ্রুতই বৈষম্যহীন সমাজে যাওয়া সম্ভব হবে না। তবে বিভিন্ন পেশা ও বেতনের ক্ষেত্রে মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিশেষ করে নারীদের কাজের স্বীকৃতি দি