চলতি বছর বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ।আগামী বছর সেটি কমে আসবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে সাড়ে ৬ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৫ শতাংশ। আগামী বছর সেটি ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়তে পারে। তাতে ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে সাড়ে ছয় শতাংশে। এই ধারা বজায় থাকলে ২০২৮ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ শতাংশ।
আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক ২০২৩ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এমন পূর্বাভাসই দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সপ্তাহব্যাপী বসন্তকালীন বৈঠক উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
আইএমএফ সাধারণত পঞ্জিকা বর্ষের হিসাবে পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থবছরের হিসাবে পূর্বাভাস দেয়। ৪ এপ্রিল বাংলাদেশের উন্নয়নবিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। একই দিন এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
আইএমএফ বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি দাঁড়াতে পারে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে। আগামী বছর সেটি কমে আসবে। ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে সাড়ে ৬ শতাংশে। আর ২০২৮ সালে মূল্যস্ফীতি আরও কমে সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতি চলতি বছর কিছুটা কমে আসতে পারে বলে মনে করছে আইএমএফ। গত বছর চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বছর তা ২ দশমিক ১ শতাংশে নামতে পারে। তবে আগামী বছর ঘাটতি আবার বেড়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।
আইএমএফের পূর্বাভাস হচ্ছে, চলতি বছর পণ্য আমদানি ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ কমতে পারে। তবে আগামী বছর ১৩ শতাংশ বাড়বে আমদানি। অন্যদিকে চলতি বছর পণ্য রপ্তানি ২ দশমিক ১২ শতাংশ কমতে পারে। আগামী বছর রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে। যদিও প্রবৃদ্ধি থাকতে পারে ১ শতাংশের নিচে।
এদিকে সরকারের রাজস্ব চলতি বছর জিডিপির ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ হবে এমনটাই বলছে আইএমএফ। আগামী বছর সেটি বেড়ে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ হতে পারে।
বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফের পূর্বাভাস হচ্ছে, উচ্চ সুদের হার বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমিয়ে দেবে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, বৈশ্বিক আর্থিক খাতের অস্থিরতা তীব্র আকার ধারণ করলে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কাছাকাছি চলে যেতে পারে।
২০২২ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি বছর সেটি কমে ২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে বলে ধারণা করছে আইএমএফ। আগামী বছর সেটি কিছুটা বেড়ে ৩ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আর্থিক খাতের অস্থিরতা আরও তীব্র হলে চলতি বছর প্রবৃদ্ধি কমে আড়াই শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ব্যাংক বন্ধ ও ক্রেডিট সুইসের জোরপূর্বক একীভূত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে ব্যাংকিং খাত কিছুটা অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে।
বিশ্বের দেশে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি আর্থিক খাতের অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির চারপাশে কুয়াশা ঘনীভূত হচ্ছে। আর্থিক খাত যতক্ষণ অস্থির থাকবে, ততক্ষণ উচ্চ অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির ভারসাম্য নিম্নগামী হবে।