আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ ও রাজস্ব আদায়ের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা আরও কমানোর অনুরোধ করেছে সরকার। চলতি মে মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে সরকারের এ অনুরোধ আইএমএফ মেনেও নিচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশের জন্য অনুমোদন করা ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে ঢাকায় আছে। দলটি অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে। এরই মধ্যে দুই কিস্তিতে ঋণের অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে একটি বৈঠক রয়েছে প্রতিনিধিদলটির। আর সচিবালয়ে আগামীকাল বুধবার শেষ বৈঠকটি করবে তারা অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের সঙ্গে।
আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১১ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে আইএমএফের প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে, জুনের মধ্যে তা সংরক্ষণ করা কঠিন হবে। তাই আইএমএফকে অনুরোধ করা হয়, এ লক্ষ্যমাত্রা যেন কমিয়ে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়।
অনেক শর্ত পূরণ করার পথে থাকলেও ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে রিজার্ভের ত্রৈমাসিক কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই সরকারের অনুরোধে আইএমএফ পরে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ৯২৭ কোটি ডলার রিজার্ভ থাকার কথা। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে আজ অনুষ্ঠেয় বৈঠকে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সরকারি লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা। সরকার এরই মধ্যে তা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা করেছে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের সূত্র অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে সংস্থাটি আদায় করেছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।
তবে ৯ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা থেকে আদায়ের পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা কম। আইএমএফের দলকে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আদায় লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো করা হলে তা পূরণ করা সম্ভব হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর আবেদন না করে সরকারের উপায় নেই। কারণ, রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করতে পারবে না।