বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী

অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা লুণ্ঠন: মোহাম্মদ আলী

নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। বদল এসেছে মন্ত্রিসভায়ও। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, অর্থনীতিই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতির বর্তমান সংকট ও করণীয় নিয়ে প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়।

অর্থনীতি নিয়ে নতুন সরকারের দুটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী। প্রথমটি হলো জ্বালানি, দ্বিতীয়টি ব্যাংক খাত।

গতকাল দৈনিক প্রথম আলো আয়োজিত ‘অর্থনীতি: নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মোহাম্মদ আলী বলেন, দেশের অর্থনীতি ও ডলার-সংকটের মূল কারণ জ্বালানি। ২০০৯ সালে এই সরকার যখন ক্ষমতা নেয়, তখন নিজস্ব মজুত থেকে দৈনিক গ্যাসের সরবরাহ ছিল প্রায় ২ হাজার ৭৫৫ ইউনিট (এমএমসিএফটি)। গত বছর সেটি ২ হাজার ১৬০ ইউনিটে নামে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর ৮২০ কোটি ডলারের এলএনজি আমদানি করেছে সরকার। নিজস্ব গ্যাস থাকলে এত বিপুল পরিমাণ ডলার খরচ করে এলএনজি আনতে হতো না। এখন ডলারে এলএনজি কিনে টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎও ডলারে কিনে টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সুতরাং ডলারের সংকট হবেই।

গ্যাস-সংকটে দেশের কারখানার উৎপাদন ৩০-৫০ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানান মোহাম্মদ আলী।

নারায়ণগঞ্জের কারখানাগুলো কয়েক দিন ধরে গ্যাস-সংকটে বন্ধ। ট্রিলিয়ন ডলারের (এক লাখ কোটি) অর্থনীতির কথা বলা হচ্ছে, ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানির পরিকল্পনা হচ্ছে, অথচ কারখানায় গ্যাস নেই। সে জন্য জ্বালানি খাতে নিজস্ব আহরণে ফিরতে হবে বলে মত দেন তিনি।

আমদানিনির্ভর জ্বালানি দিয়ে বাংলাদেশের শিল্প টেকসই হবে না। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদে এখন পর্যন্ত একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়নি, সব সময় আমলা দিয়ে চালানো হচ্ছে। ভূতত্ত্ব নিয়ে যাঁদের জ্ঞান নেই, তাঁদের দিয়ে ভূতত্ত্ব দপ্তর চালাচনো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জাতি কী আশা করতে পারে।

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জ্বালানিসংকট নিয়ে আমরা বহুদিন ধরেই বলছি। বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। মূলত বিদ্যুৎকেন্দ্র না চালিয়েই খরচ দেওয়া হয়েছে।’

খেলাপি ঋণকে দুটি ভাগে ভাগ করার পরামর্শ দেন মোহাম্মদ আলী। এক. বেনামি ঋণ, দুই. মন্দ ঋণ।

তাঁর প্রশ্ন, ব্যবসায়ীরা কেন হল-মার্ক কিংবা বিসমিল্লাহর কেলেঙ্কারির দায়ভার নেবে।  বেসিক ব্যাংকের দায়ভার কেন নেবে। এগুলো বাদ দেওয়ার পর সত্যিকারের মন্দ ঋণ বের হবে। ব্যাংকের যোগসাজশে এই বিপুল পরিমাণ টাকা বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে; বাংলাদেশ ব্যাংক কি তখন ঘুমিয়ে ছিল। যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ঋণপত্র বেশি হলে আপত্তি জানায়, সেখানে কীভাবে এক ব্যক্তি চার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায়।

সে জন্য মোহাম্মদ আলীর মত, বাংলাদেশ ব্যাংকে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে; আজ বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এই লুণ্ঠন।