পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত

  • ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ১০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দেবে।

  • একনেকে চারটি প্রকল্প অনুমোদন।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক সরকার এসে এই পরিকল্পনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

গতকাল বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। সভার পরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সম্পর্কে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এটি একধরনের রাজনৈতিক দলিল। রাজনৈতিক সরকার তাদের মতো করে পরিকল্পনা করবে, নীতি নির্ধারণ করবে। এতে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা থাকে। আমরা বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেব না। তারা (রাজনৈতিক সরকার) ক্ষমতায় এসে সিদ্ধান্ত নেবে। সে জন্য অর্থনীতির জন্য দিকনির্দেশনা ও অর্থায়ন নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ও অর্থায়নের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে এই টাস্কফোর্স প্রতিবেদন দেবে।

কেন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত করা হলো, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অতীতে দেখা গেছে যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা যা করার কথা ছিল, সেই অনুসারে বরাদ্দ বা বাজেট করা হয়নি। ফলে এসব পরিকল্পনার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে।

দেশে এ পর্যন্ত আটটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ১৯৭৩ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও এরশাদ সরকারের আমলে এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। সর্বোচ্চ চারটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

২০০১–০৬ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পরিবর্তে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের আলোকে মধ্যমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। বর্তমানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২০-২৫) শেষ বছর চলছে। আগামী বছরের জুন মাসে এটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

মৃতপ্রায় প্রকল্পের অর্থ বাজেট সহায়তা

অতীতে বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে ওই প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করা যায়নি। এখন আর ওই সব প্রকল্পের প্রাসঙ্গিকতাও নেই। এমন প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এসব প্রকল্পে প্রায় ১০০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল। এখন বিশ্বব্যাংক বাজেট সহায়তা হিসেবে এসব অর্থ দিতে চায় বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই অর্থ পাওয়া যাবে। তিনি জানান, পাইপলাইনে বিপুল পরিমাণ অর্থ পড়ে আছে। বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও জানান, এখন থেকে প্রকল্প অনুমোদনের চেয়ে বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রকল্প একনেকে পাস করিয়ে নিলেই হবে না; বাস্তবায়ন কেমন হচ্ছে সেটাও নজরদারিতে রাখা হবে। তিনি বলেন, অতীতে প্রকল্প পাস করিয়ে নিয়ে মন্ত্রণালয়গুলো মনের আনন্দে সব করত।

প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, মন্ত্রণালয় পর্যায় থেকে যাতে প্রকল্প অনুমোদন করা যায়, সে জন্য প্রকল্পের টাকার অঙ্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

একনেকে চার প্রকল্প পাস

গতকালের একনেক সভায় চারটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে খরচ হবে ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ (১ম সংশোধিত); দুটি মূল্যায়ন ও উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) ও দুটি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দলপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন; ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন (২য় সংশোধিত) এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান (২য় পর্যায়)।