সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম জোরদার ও পেনশন কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা নির্ধারণ করতে প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির নাম ঠিক করা হয়েছে ‘সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ’। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে ঋণ নেবে। কিছু অংশের তহবিল জোগাবে সরকার নিজেই। সরকারের দিক থেকে এ পর্যায়ে প্রকল্পের সঙ্গে তিনটি পক্ষ অর্থাৎ অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ জড়িত।
সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে অর্থ বিভাগ সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দিয়েছে। আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ এরই মধ্যে সারসংক্ষেপ তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালামের কাছে উপস্থাপন করেছে। মন্ত্রীর অনুমোদনের পর এটি ইআরডির কাছে যাবে। এরপর অর্থায়নের জন্য ইআরডি তা এডিবির কাছে পাঠাবে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পের মেয়াদ হবে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে এডিবির ঋণ হবে ২৫ কোটি ডলার, আর সরকার ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তহবিল জোগাবে।
চিঠিতে অর্থ বিভাগ বলেছে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতির ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা দরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া অবকাঠামো স্থাপন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আর্থিক বিশ্লেষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদন করা সম্ভব হবে।’
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পের মেয়াদ হবে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে এডিবির ঋণ হবে ২৫ কোটি ডলার, আর সরকার ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তহবিল জোগাবে। প্রতি ডলার ১১৭ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৩ হাজার ৮০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতির কার্যক্রমকে বেগবান করতেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্পটি হবে বলে আশা করছি।’
২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়। এরপর একই বছরের ২ এপ্রিল গঠিত হয় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ আগস্ট প্রগতি, প্রবাস, সমতা ও সুরক্ষা নামে চারটি পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ইত্যাদি সংস্থায় ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের জন্য চালু করা হয়েছে ‘প্রত্যয়’ নামে আরেকটি কর্মসূচি। মোট ৪০৩টি সংস্থার নতুন কর্মীদের জন্য প্রত্যয় প্রযোজ্য। তবে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তা বাতিলের দাবিতে এখন আন্দোলন করছেন।
২০২৫ সালের ১ জুলাই ও এর পর থেকে যাঁরা সরকারি চাকরিতে যোগ দেবেন, তাঁদের জন্যও নতুন একটি পেনশন কর্মসূচি চালু করা হবে, যার নাম প্রাথমিকভাবে রাখা হয়েছে ‘সেবক’। গত ১০ মাসে শুরুতে চালু চার কর্মসূচিতে তিন লাখের বেশি নিবন্ধন হয়েছে, যার আওতায় জমা পড়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পের মেয়াদ হবে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে এডিবির ঋণ হবে ২৫ কোটি ডলার, আর সরকার ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তহবিল জোগাবে।
সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বিভাগ এডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এডিবি অনানুষ্ঠানিকভাবে অর্থ বিভাগকে জানিয়েছে, এতে তারা ঋণ দিতে রাজি। প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) প্রণয়নের জন্য এডিবি এবং ইআরডির মধ্যে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত ছকে পিডিপিপি প্রণয়ন করা হয়, যা এখন ইআরডিতে আছে।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য রেহানা পারভীন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, পিডিপিপিতে সামান্য কিছু ত্রুটি ছিল। তা সংশোধন করে এরই মধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রীর দপ্তরে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতির কার্যক্রমকে বেগবান করতেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্পটি হবে বলে আশা করছি।জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা
অর্থ বিভাগ চিঠিতে বলেছে, প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে পিডিপিপি এখনো পরিকল্পনা কমিশনের নীতিগত অনুমোদন পায়নি। চিঠিতে অনুরোধ করা হয়, আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ যেন নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। কারণ, নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পর প্রকল্পের চূড়ান্ত ছক (ডিপিপি) তৈরি করা হবে। ফাঁকে একটি সমীক্ষাও করবে (ফিজিবিলিটি স্টাডি) এডিবি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দেখছি যে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা না করেই পেনশন কর্তৃপক্ষ কিছু বিষয় চালু করে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তাই একটি প্রকল্পের দরকার ছিল। সে দিক থেকে এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।’
তবে অযথা ও যেনতেন খরচ করার সুযোগ যেন প্রকল্পে না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি বলে মনে করেন সেলিম রায়হান।
আমরা দেখছি যে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা না করেই পেনশন কর্তৃপক্ষ কিছু বিষয় চালু করে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তাই একটি প্রকল্পের দরকার ছিল। সে দিক থেকে এটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান