অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা করা খুব কঠিন কাজ, সে তুলনায় চাঁদাবাজির সমঝোতা অনেক সহজ। সরকার শুল্ক কমালেও বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। এর পেছনে একটি কারণ, সমঝোতার মাধ্যমে চাঁদাবাজি জারি রাখা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো বাজারে গেলে দুই-তিন ধরনের চাঁদাবাজ দেখা যায়। এদের ভেতর কিছু (চাঁদাবাজ) আগের সরকারের, কিছু লোক ভবিষ্যৎ সরকারের চাঁদাবাজ, আর কিছু লোক স্থানীয়। তাঁরা পরস্পর সমঝোতা করে চাঁদাবাজি করেন।
আজ রোববার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে সম্মেলন বক্তা ছিলেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
অনুষ্ঠানে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি নিজে কারওয়ান বাজারে গিয়েছি। সেখানে দেখেছি, চাঁদাবাজি তিন ভাগে ভাগ করা; সবার ভেতর সমঝোতা আছে। অথচ আমাকে বলা হচ্ছে, “সিন্ডিকেট ভাঙো।”’
পণ্যের উৎপাদন খরচ ও ভোক্তার ব্যয়ের মধ্যে দাম কমানো সরকারের মূল উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘উৎপাদক ও ভোক্তার মাঝখানের বাড়তি দামটা অকারণে হয়। সরবরাহ শৃঙ্খলের মধ্যে কিছু ব্যক্তি অবশ্যই থাকবেন, যাঁরা পণ্য সরবরাহে সহযোগিতা করেন। কিন্তু বাজারে ট্রাকটা এলে তা ছুঁয়ে দিয়েই যাঁরা বলেন, ‘আমাকে ৫০০ টাকা দাও;’ তাঁরা মধ্যবর্তী লোক নন, তাঁরা চাঁদাবাজ। এভাবে পাঁচ লাখ টাকার পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক বাজারে এলে তা একস্থানে দাঁড়িয়েই সাত লাখ টাকা হয়ে যায়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে দুর্নীতির কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চুরি অনেক দেশেই হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এটা এত ব্যাপক যে আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা আছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সব ধ্বংস করা হয়েছে। নীতিনির্ধারক, আমলা, ব্যবসায়ী সবাই মিলে নিয়ম ভেঙেছেন।
শেয়ার ব্যবসায় কারসাজির অভিযোগে সম্প্রতি জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে জরিমানা করা হয়। এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাকিব আল হাসানকে জরিমানা করা হয়েছে; সবার মাথাব্যথা হলো। সবাই হায় হায় করে বলছেন, এত বড় খেলোয়াড়কে জরিমানা করা হলো। আরে তাঁকে তো দুই বছর আগেই জরিমানা করার কথা ছিল।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সবাই জানেন, শেয়ারবাজারে কীভাবে কারসাজি হয়। আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা নিয়ে চলে গেল। এটা আপনার-আমার সবার টাকা। তখন অ্যাকশন নেওয়া হলো না। এখন অ্যাকশন নিতে গেলে কথা হয়। অ্যাকশন নিতে গেলে তো কিছুটা ব্যথা লাগবেই। সব সময় তো অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে সব অপারেশন করা যায় না।’
অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অন্তবর্তী সরকার সঠিকভাবেই সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং নির্বাচনের আগে এসব সংস্কার শেষ করা প্রয়োজন। এ জন্য বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনীতিবিদেরা একটি পথরেখা চাইছেন কীভাবে নির্বাচন করবেন। কিন্তু রাজনীতির পথরেখাকে কতখানি আমরা সুগম করতে পারব, সংস্কারকে আরও কত বেশি গভীর করতে পারব— তার পুরোটা নির্ভর করবে, আমরা কতখানি মানুষকে অর্থনৈতিক স্বস্তি দিতে পারব, তার ওপরে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, যদি মানুষকে অর্থনৈতিক স্বস্তি দিতে না পারি, আইন–শৃঙ্খলা দিয়ে সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে মানুষের ওই সংস্কারের জন্য যতই ভালোবাসা থাকুক, ধৈর্য থাকবে না। এ জন্য মধ্যমেয়াদে একটি সমন্বিত, কার্যকর, আস্থা প্রবর্ধক কর্মসূচি নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।