ডলার
ডলার

ঋণদাতাদের কাছে ২০০ কোটি ডলার চায় বাংলাদেশ

আগামী ১ বছরে ২০০ কোটি ডলারের বেশি বাজেট–সহায়তা চায় বাংলাদেশ। মূলত রাজস্ব আদায়ের নাজুক পরিস্থিতিতে বাজেটের অর্থের জোগান দিতে সরকার এখন এই ধরনের সহায়তার দিকে মনোযোগী হয়েছে। রিজার্ভ–সংকট, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি—এসব সমস্যার সমাধানে নগদ ডলারের বিকল্প নেই। এ জন্য নতুন করে বিশ্বব্যাংকের কাছে ৭৫ কোটি ডলার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ৬৫ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ।

এর বাইরে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), ফ্রান্স সাহায্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে বাজেট–সহায়তা আসতে পারে। এআইআইবি ও ফ্রান্স সাহায্য সংস্থার কাছ থেকে আসতে পারে ৭০ কোটি ডলারের বেশি। এখন এসব ঋণদাতা সংস্থার সঙ্গে দর-কষাকষি চলছে। এ ছাড়া চীনের কাছ থেকেও বড় ধরনের বাজেট–সহায়তা পাওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সরকারের এখন নগদ ডলার দরকার। প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশি সহায়তা নিলে প্রকল্পের কেনাকাটার সময় ডলার আসে। এতে অনেক সময় চলে যায়। আর বাজেট–সহায়তার ডলার অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে। তাই ডলারের জোগান বাড়াতে বাজেট–সহায়তাই উত্তম পন্থা।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অন্তত ৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বাজেট–সহায়তা ছাড় করতে চায় ইআরডি।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের এখন নগদ ডলার দরকার। প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশি সহায়তা নিলে প্রকল্পের কেনাকাটার সময় ডলার আসে। এতে অনেক সময় চলে যায়। আর বাজেট–সহায়তার ডলার অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে। তাই ডলারের জোগান বাড়াতে বাজেট–সহায়তাই উত্তম পন্থা।’

চলতি মে মাসেই বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় ডিপিসির আওতায় বাজেট–সহায়তা অনুমোদনের কথা রয়েছে। কিন্তু তা ৫০ কোটি ডলার, নাকি ৭৫ কোটি ডলার হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি।

বিশ্বব্যাংকের কাছে ৭৫ কোটি ডলার চায়

চলতি অর্থবছরে ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের (ডিপিসি) আওতায় শেষ কিস্তির ২৫ কোটি ডলার পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত বছরের ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার এই অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ কোটি ডলার করার প্রস্তাব দেয়। বিশ্বব্যাংক তাতে রাজিও হয়।

এ ছাড়া গত মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভা চলাকালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই সহায়তা বাড়িয়ে ৭৫ কোটি ডলার করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক এখনো এ বিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি।

চলতি মে মাসেই বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় ডিপিসির আওতায় বাজেট–সহায়তা অনুমোদনের কথা রয়েছে। কিন্তু তা ৫০ কোটি ডলার, নাকি ৭৫ কোটি ডলার হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। ডিপিসির এই ঋণের শর্ত হলো সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে রাশ টানতে হবে। এ ছাড়া নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইন পাসের শর্তও ছিল। দুটি শর্তই বাংলাদেশ পূরণ করেছে। এ মাসে বাজেট–সহায়তার প্রস্তাব পাস হলে পরের দুই সপ্তাহের মধ্যে অর্থ পেয়ে যাবে বাংলাদেশ।

এডিবি জোগাড় করছে ১৩৭ কোটি ডলার

এডিবির সঙ্গে এখন দুটি বাজেট–সহায়তা নিয়ে দর-কষাকষি চলছে। একটি হলো স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ৪০ কোটি ডলারের সহায়তা। অন্যটি হলো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ২৫ কোটি ডলারের সহায়তা। এই দুটি ঋণের অন্যতম শর্ত হলো রাজস্ব, ব্যাংক খাতসহ আর্থিক খাত সংস্কার, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইনি সংস্কারসহ বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এডিবির কাছ থেকে এই অর্থ ছাড় হতে পারে।

এ ছাড়া এডিবি বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে বাজেট–সহায়তা পাওয়ায় সহায়তা করছে। এর মধ্যে আছে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) ৪০ কোটি ডলার এবং ফ্রান্সের সাহায্য সংস্থার কাছে সাড়ে ৩২ কোটি ডলার। এই দুটি সংস্থার কাছ থেকে বাজেট–সহায়তা পেতে সাহায্য করছে এডিবি। আগামী অর্থবছরের মধ্যেই এই অর্থ পাওয়া যেতে পারে।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারের এখন প্রতিবছর ১ হাজার কোটি ডলারের মতো বিদেশি সহায়তার চাহিদা আছে।

চার বছরে এসেছে ৬৫০ কোটি ডলার

কোভিড শুরু হওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে বাজেট–সহায়তা চায় সরকার। গত কয়েক বছরে এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে অন্তত ৬৫০ কোটি ডলারের বাজেট–সহায়তা মিলেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭৭ কোটি ডলার বাজেট–সহায়তা দিয়েছে দাতারা। সবচেয়ে বেশি বাজেট–সহায়তা এসেছে ২০২১-২২ অর্থবছরে। ওই বছরে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার এসেছিল। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০৯ কোটি ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলার এসেছে।

গত অর্থবছর পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১ হাজার ১০৯ কোটি ডলার বাজেট–সহায়তা নিয়েছে বাংলাদেশ। ইআরডির কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারের এখন প্রতিবছর ১ হাজার কোটি ডলারের মতো বিদেশি সহায়তার চাহিদা আছে। নমনীয় ও কঠিন শর্তের ঋণ মেলে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলার। বাকিটা সহায়তা হিসেবে নিতে হয়। বাজেট–সহায়তা অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে নগদ অর্থ পেয়ে যায় বাংলাদেশ।