সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর ও অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি আরও বলেন, দেশ থেকে পুঁজি পাচার হচ্ছে; ব্যাংক খাত আছে বিশৃঙ্খল অবস্থায়। বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে বাজেট যেন হাত-পা বাঁধা বলির পশুর মতো, তার কিছু করার নেই। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে বাজেট সংকোচনের বিকল্প নেই বলে মনে করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ও সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪–২৫ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ এই অনুষ্ঠান হয়।
সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মৌলিক দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বড় ধরনের গুণগত পরিবর্তন দরকার, তা না হলে সংকট কাটানো যাবে না। কিন্তু সরকারের উচ্চতম মহলে সেই উদ্যোগ আছে কি না— এমন প্রশ্ন তোলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
সরকারের বিদেশি ঋণ নেওয়া অব্যাহত আছে; সুদ ব্যয়ের পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজেটও বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
বক্তৃতায় দেশের অর্থনীতির এক বিশৃঙ্খল পরিবেশের চিত্র তুলে ধরেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বলেন, ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণহীন; প্রশাসনে দুর্নীতি আছে। অর্থনীতিতে নেই আস্থার পরিবেশ। অবাধে কালোটাকার সঞ্চালন হচ্ছে। পাচার হচ্ছে অনেক টাকা। অর্থনীতিতে সমস্যা আগে থেকেই ছিল, কিন্তু এত দিন সেই সমস্যা হজম করার শক্তি অর্থনীতির ছিল। এখন সেই শক্তি নেই বলে এসব সমস্যা বেরিয়ে আসছে। এই বাস্তবতায় দৃঢ় পথ নির্দেশনা দরকার বলে মত দেন তিনি।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, এখন যে পথে অর্থনীতি চলছে, সেই পথের পরিবর্তন না হলে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি, যদিও দেশে অনেক দিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এটা বিবেচনাপ্রসূত হয়নি বলে মনে করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বলেন, করনীতি দেখে মনে হয়, বাঘের হরিণ শিকার করার নীতিতে চলছে রাজস্ব ব্যবস্থা। অর্থাৎ ছোট ও ক্ষমতাহীনদের চাপে রাখা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
সরকার এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, স্মার্ট মানুষ নীতিহীন হলে ভয়ংকর পরিস্থিতি হয়। এ ছাড়া তাঁর অভিযোগ, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে সরকারের অনুগত ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অন্যায় সুবিধা পাচ্ছে।