রপ্তানি তথ্যের গরমিলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ প্রধান পরিসংখ্যানগুলো পাল্টে যেতে পারে। অথচ এ নিয়ে জাতীয় পরিসংখ্যান উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। সভায় অংশ নেওয়া উপদেষ্টা পরিষদের কেউ বিষয়টি উত্থাপন করেননি। যদিও কয়েক দিন ধরে রপ্তানি তথ্যের পরিসংখ্যান ত্রুটি তথা গরমিল নিয়ে আর্থিক খাতে বেশ আলোচনা চলছে।
আজ বৃহস্পতিবার পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালামের সভাপতিত্বে জাতীয় পরিসংখ্যান উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিনসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অংশ নেওয়া একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রথম আলোকে জানান, রপ্তানির তথ্য যেহেতু পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তৈরি করে না। তাই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানির যে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করেছে তা নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
এ দিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এ নিয়ে কোনো আলোচনার কথা বলা হয়নি। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের বিষয়াবলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিবিএসের কার্যক্রম; বিবিএসের দক্ষতা বৃদ্ধি, মাঠপর্যায়ে পরিসংখ্যান হালনাগাদ করা—এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানির তথ্য নিয়ে এত দিন একটি বিভ্রান্তি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করেছে। এর ফলে জিডিপির আকার সামান্য কমতে পারে। পাশাপাশি মাথাপিছু আয়েও প্রভাব পড়বে।’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে তথ্য সমন্বয় করে সঠিক চিত্র প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), এনবিআর ও বিবিএস কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ জুলাই সদ্য বিদায়ী ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানির প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, এ সময়ে ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য–সেবা রপ্তানি হয়েছে। দুই হিসাবের পার্থক্য ১৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। এর পর থেকে রপ্তানি তথ্যের গরমিল নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়।
রপ্তানি তথ্যের গরমিলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার কমে যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে হিসাব করে দেখা গেছে, জিডিপির আকার ২ শতাংশ কমতে পারে, যার পরিমাণ প্রায় ৯০০ কোটি ডলার। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী জিডিপির আকার (প্রতি ডলারের দাম ১১৫ টাকা ধরে) ১ লাখ ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমতে পারে। জিডিপির আকার কমলে স্বাভাবিকভাবে মাথাপিছু আয়ও কমবে।
একটি দেশের ভেতরে এক বছরে পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টি করতে গিয়ে কী পরিমাণ মূল্য সংযোজন হলো তা জিডিপির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আগের বছরের তুলনায় পরের বছর যে মূল্য সংযোজন হয়, সেটাকে বলা হয় জিডিপি প্রবৃদ্ধি। একইভাবে মূল্য সংযোজন কমে গেলে প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়।