আগামী বাজেটে ২০০০ সিসির বেশি গাড়িতে সম্পূরক শুল্ক বাড়তে পারে। একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে বাড়তি আয়কর আরোপের প্রস্তাব থাকতে পারে।
দেশে দামি গাড়ি আরও দামি হবে। তাই দামি গাড়ির স্বপ্ন বাদ দিতে হবে। আর যদি নতুন আরেকটি গাড়ি কেনেন, তাতে বছর শেষে খরচ বাড়বে। একাধিক গাড়ি ব্যবহার করে আপনি যানজট বাধাবেন, পরিবেশেরও ক্ষতি করবেন—তা হয় না। সরকার এবার বেশ কঠোর হচ্ছে। একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে বাড়তি আয়কর আরোপ করা হবে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এমন প্রস্তাবই আসছে। দামি গাড়িতে আরও কর বসবে। আবার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় বা একাধিক গাড়ি থাকলেও বেশি কর দিতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে গাড়ির ওপর নতুন করে আরোপ হতে পারে। ২০০১ সিসি থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানিতে এখন ২০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসে। এটি বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ করা হতে পারে। ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। এটি বাড়িয়ে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে।
মনে রাখতে হবে, সম্পূরক শুল্কের কারণে গাড়ির দাম বাড়ে। কারণ, গাড়ির ব্লুবুক বা শুল্কায়নযোগ্য দামের ওপর প্রথম সম্পূরক শুল্ক বসে। তারপর আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম করসহ অন্যান্য কর বসে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমনিতেই স্থানীয় বাজারে গাড়ির দাম বেড়েছে। বাজেটে করারোপ হলে তা আরও বাড়বে।
২০০০ সিসির বেশি ইঞ্জিনক্ষমতাবিশিষ্ট গাড়ি সাধারণত জিপগাড়ি হয়। এখন দেশে বিপুলসংখ্যক জিপগাড়ি কিংবা এসইউভি মডেলের গাড়ি আসছে। জনপ্রিয় হচ্ছে জিপগাড়ির ব্যবহার। টয়োটা, মিতসুবিশি, নিশান, টাটাসহ নানা খ্যাতনামা কোম্পানির গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে।
কয়েক বছর ধরে জিপগাড়ির ব্যবহার বেড়েছে। সরকার যদি এখন রাজস্ব আহরণের চিন্তা থেকে সম্পূরক শুল্ক বাড়ায়, তাহলে গাড়ি আমদানি কমে যাবে। তাতে সরকার কম রাজস্ব পাবে।আবদুল হক, সাবেক সভাপতি, বারভিডা
এ বিষয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারবিডার সাবেক সভাপতি আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক বছর ধরে জিপগাড়ির ব্যবহার বেড়েছে। সরকার যদি এখন রাজস্ব আহরণের চিন্তা থেকে সম্পূরক শুল্ক বাড়ায়, তাহলে গাড়ি আমদানি কমে যাবে। তাতে সরকার কম রাজস্ব পাবে। বড় শিল্পকারখানার মালিকেরা এসব গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবেন। তিনি জানান, দেশে ৩০০০ সিসির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ি খুব একটা আসে না। ২০০১ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানি অনেক বেড়েছে।
ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও খরচ বাড়ছে। আপনি যদি একের অধিক গাড়ি ব্যবহার করেন, তাহলে আপনাকে অন্যদের চেয়ে বেশি কর দিতে হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দ্বিতীয় গাড়ির ক্ষেত্রে বিদ্যমান অগ্রিম কর ৫০ শতাংশ বেশি দিতে হয়। এটি সিসিভেদে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হতে পারে। এতে কর বাড়তে পারে ২০ হাজার টাকা থেকে তিন লাখ টাকা।
* ২০২২ সালে ১০,২৪৯টি জিপ গাড়ির নিবন্ধন হয়েছে, যা ২০২০ সালে ছিল ৪,৯১১। * ২০২২ সালে ১৬,৬৯৫টি ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন নিয়েছে, যা তিন বছর আগে ছিল ১২,৪০৩।
এবারে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ‘কার্বন ট্যাক্স’–এর আদলে এমন কর বসানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, যাঁরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন, তারাই দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। এখন ডলার–সংকট আছে, রিজার্ভ ধরে রাখতে হবে। এমন অবস্থায় দামি দামি গাড়ি আমদানি করে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করা কমানোর সময় এসেছে। এ ছাড়া প্রগতিশীল করব্যবস্থায় ধনীদের বেশি কর দিতে হয়।
গত তিন বছরের দেশে জিপ ও এসইউভি গাড়ির বাজার দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, তারা ২০২২ সালে সব মিলিয়ে ১০ হাজার ২৪৯টি জিপগাড়ির নিবন্ধন দিয়েছে। ২০২০ সালে নিবন্ধন নিয়ে রাস্তায় নেমেছে ৪ হাজার ৯১১টি জিপ। গাড়ি আমদানিকারকেরা জানান, ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়িতে গড়ে ৭০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা শুল্ক-কর দিতে হয়। এখন সম্পূরক শুল্ক বাড়লে এসব গাড়ির দাম আরও বাড়বে।
এদিকে প্রাইভেট কার বা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার তিন বছরে প্রায় ৩৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০২২ সালে সব মিলিয়ে ১৬ হাজার ৬৯৫টি ব্যক্তিগত গাড়িকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। তিন বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৪০৩টি গাড়ি।
ব্যক্তিগত গাড়ি বা জিপ—দুই ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রাজধানীর ঢাকায় নিবন্ধন নেওয়া। এর মানে রাজধানী ও এর আশপাশের অঞ্চলেই জিপ ও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে।