সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মতামত এলে আবার বৈঠক বসবে। এরপর সংশোধন করা হবে।
আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪ জারি করার মাত্র সাত মাসের মাথায় তা সংশোধন করা হচ্ছে। সাড়ে চার বছর পর গত মে মাসে আমদানি নীতি আদেশ জারি করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য নিজে থেকে নীতিটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়নি। আদেশ জারির পর আমদানির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কোম্পানি ও সমিতি অসুবিধায় পড়তে থাকে। সে জন্যই সংশোধনের উদ্যোগ। আর এ ক্ষেত্রে তাদের অধিকাংশেরই দাবি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার মোটরসাইকেলের সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি (সিসি), শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে হর্নের মাত্রা, প্রপাইলিন ও ইথাইলিন, কাগজ ও সেলোফিন, ইঞ্জিন অয়েল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতশিল্পের কাঁচামাল পাম অলিন, মিথাইল ব্রোমাইড, গ্যাস সিলিন্ডার, ব্যাটারি, ফ্যাক্টরিং সেবা ইত্যাদি বিষয়ে আমদানি নীতি সংশোধন করা হচ্ছে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে সম্প্রতি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪–এর সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধনবিষয়ক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশোধনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে অবশ্য শিল্প মন্ত্রণালয়; কৃষি মন্ত্রণালয়; জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ; সুরক্ষা সেবা বিভাগ; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতও দরকার।
আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দিচ্ছি। তাদের মতামত পাওয়ার পর আরেকটি বৈঠক ডাকা হবে। তারপর আমদানি নীতি সংশোধনের কাজ শুরু হবে।তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগও বাংলাদেশের বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশের একটি অংশ সংযোজন করতে অনুরোধ করেছে। তারা আমদানি করা খাদ্যদ্রব্যের ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত গবেষণাগারের (ল্যাবরেটরি) তালিকা এবং মনুষ্য খাদ্যের উপযুক্ততা নির্ণয়ে অভিন্ন মানদণ্ড নির্ধারণ করতে বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দিচ্ছি। তাদের মতামত পাওয়ার পর আরেকটি বৈঠক ডাকা হবে। তারপর আমদানি নীতি সংশোধনের কাজ শুরু হবে।’
বাংলাদেশ মোটরসাইকেল সংযোজনকারী ও উৎপাদক সমিতি (বিএমএএমএ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৬৫ সিসির বদলে ২৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানির সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এর বিরোধিতা করেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুধু রপ্তানির ক্ষেত্রে ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানির বিধান করা যেতে পারে।
‘নীতি আদেশ জারির পর ব্যবসায়ীরা যে যে বিষয়ে সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। শিগগিরই এগুলো সংশোধন করা হবে বলে আশা করছি।’মো. আমিন হেলালী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৬৫ সিসি পর্যন্তই মোটরসাইকেল আমদানি করা যাবে। তবে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান রপ্তানির উদ্দেশে ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধের পাশাপাশি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে হর্নের মাত্রা এখনকার ১০০ ডেসিবেলে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
পেট্রোকেমিক্যালশিল্পের অন্যতম কাঁচামাল ইথাইলিন ও প্রপাইলিন। অথচ আমদানি নীতিতে এ দুটি পণ্য অন্তর্ভুক্ত নেই। মেঘনা পিভিসি লিমিটেড পণ্য দুটি অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে বলা হয়, পণ্য দুটি অন্তর্ভুক্ত করার আগে বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অনুমতি লাগবে। আমদানি নীতির চতুর্থ অধ্যায়ে মদ, বিয়ার ইত্যাদির এইচএস কোড বলা আছে ২১ দশমিক শূন্য ৩ থেকে ২২ দশমিক শূন্য ৬। বাংলাদেশ হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এসব পণ্যের এইচএস কোড ২২ দশমিক শূন্য ৮–এ অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সুরক্ষা সেবা বিভাগের মতামত নিয়ে তা করা হবে।
আমদানি নীতি আদেশে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) নির্ধারিত মান (বিডিএস) অনুযায়ী পণ্যের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে রাইটিং অ্যান্ড প্রিন্টিং পেপারসের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেটি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছে। তবে এনবিআর বলেছে, পেপারসের সঙ্গে যেহেতু রাইটিং অ্যান্ড প্রিন্টিং শব্দ সংযুক্ত আছে, সেহেতু বিএসটিআইয়ের মতামত নিতে হবে।
মিথাইল ব্রোমাইড আমদানিনিষিদ্ধ পণ্য। এ কারণে অস্ট্রেলিয়ায় চাল ও মসলা রপ্তানিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে খুরশিদ ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট দাবি করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতামত নেবে।
এদিকে গ্যাস সিলিন্ডার আমদানির ক্ষেত্রে আলাদা এইচএস কোড চায় পানামা সিএনজি করভারশন। পরিবেশবান্ধবভাবে ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে পুরোনো ব্যাটারি আমদানির অনুমতি চায় অ্যাকুমিলেটর ব্যাটারি উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি। এ দুটির জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
পাম অলিন আমদানির ক্ষেত্রে বিএসটিআই থেকে মান উত্তীর্ণের প্রত্যয়ন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চেয়েছিল বম্বে সুইটস অ্যান্ড কোম্পানি, কাশেম ফুড প্রোডাক্টস ও নেস্লে বাংলাদেশ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী এটা বহাল থাকবে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া সালফার, ফসফরাস, পটাশিয়াম ক্লোরেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম নাইট্রেড, আর্সেনিক সালফাইড আমদানি করা যায় না। এএ রসায়ন শিল্প লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ অনুমতি নেওয়া থেকে অব্যাহতি চাইলে তা নাকচ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নীতি আদেশ জারির পর ব্যবসায়ীরা যে যে বিষয়ে সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। শিগগিরই এগুলো সংশোধন করা হবে বলে আশা করছি।’