টাঙ্গাইলে একটি লেবুর গড় দাম ৫ টাকা। সেই লেবু ঢাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। ছোট একটা লেবুর দাম এত বেশি কীভাবে হচ্ছে, সেই হিসাব মেলাতে পারছেন না বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। তাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কারওয়ান বাজারসহ পাইকারি বাজারে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে গতকাল রোববার দুপুরে বাজার তদারকিতে গিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। টাউন হল বাজার ঘুরে তিনি কাঁচাবাজার বণিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে এক হালি লেবুর দাম সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। তাতে একেকটি লেবুর দাম পড়ে ১৫ টাকা।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পেশাজীবী মানুষেরা বেশি চাপ বোধ করছেন। একটা নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে তাঁদের চলতে হয়। তাঁদের সুবিধা দিতে সরকার ন্যায্যমূল্যের দোকান চালুর চিন্তা করছে।আহসানুল ইসলাম, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
অথচ আমি আমার নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলে খোঁজ নিয়ে জানলাম, সেখানে পাইকারিতে প্রতিটি লেবু ৫-৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসে একটি লেবুর দাম বেড়ে তিন গুণ হয়ে যাচ্ছে। এ অঙ্ক কোনোভাবেই মিলছে না।’
লেবুর এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করলে মতবিনিময় সভায় এ সমস্যা সমাধানে একটি পথ বাতলে দেন টাউন হল কাঁচাবাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজার আড়তে সবজি আসার আগে রাস্তার ওপরেই তিন-চার হাতবদল হচ্ছে। তারপর সে সবজি আড়ত থেকে চড়া দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের। তাতে লেবু, শসা থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সরকারের কঠোর নজরদারির পরামর্শ দেন তিনি।
জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রোজায় লেবু, শসা ও বেগুনের চাহিদা একটু বেশি থাকে। এখন আপনারা খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, কারওয়ান বাজারের মতো পাইকারি বাজারে এসব পণ্যের দাম বেশি রাখা হচ্ছে। তাই আমরা সরকারের অন্য সংস্থার সঙ্গে মিলে উৎপাদন পর্যায় থেকে সবখানে নজরদারি বাড়াব। কেউ কারসাজি করে দাম বাড়ালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মতবিনিময় সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর যে খেজুর ছিল ৫০০ টাকা, এবার সেই দাম বেড়ে হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। এটা সিন্ডিকেটের কাজ। মন্ত্রী মহোদয় এই সিন্ডিকেট ভাঙতে কাজ করছেন।
সভায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হাসান আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ডিম, মুরগি থেকে শুরু করে চিনি ও তেলের মতো পণ্যের বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা যারা লোপাট করছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
একই সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি বাজার কমিটিকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে বাজারে শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে সুবিধা হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
কারওয়ান বাজার আড়তে সবজি আসার আগে রাস্তার ওপরেই তিন-চার হাতবদল হচ্ছে। তারপর সে সবজি আড়ত থেকে চড়া দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।নুরুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, টাউন হল কাঁচাবাজার বণিক সমিতি
মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পেশাজীবী মানুষেরা বেশি চাপ বোধ করছেন। একটা নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে তাঁদের চলতে হয়। তাঁদের সুবিধা দিতে সরকার ন্যায্যমূল্যের দোকান চালুর চিন্তা করছে। সেটা কীভাবে করা সম্ভব, কীভাবে করলে সবাই সমান সুবিধা পাবে, তা নিয়ে ভাবছি আমরা। তবে এখন সরকারের কাছে অগ্রাধিকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা।’ দু-একটা জিনিসের দাম বেশি থাকলেও বাজারে অস্থিরতা নেই বলেও দাবি করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার বণিক সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান খান। দুই ব্যবসায়ী নেতা টাউন হল বাজারে কোনো অব্যবস্থাপনা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডলের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় টাউন হল বাজারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।