ঋণের পরিমাণ কমলেও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে ঋণের অনুপাত পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
মহামারির আগে থেকেই ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করে বৈশ্বিক ঋণ। কোভিডের সময় তা আরও ফুলেফেঁপে ওঠে। মূলত কোভিডের মধ্যে মানুষকে স্বস্তি দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার বিপুল প্রণোদনা দেয়। এতে বেড়ে যায় ঋণের বোঝা। সুদের হার কম থাকার কারণে ঋণ গ্রহণ ত্বরান্বিত হয়।
তবে সেই বাস্তবতা থেকে পৃথিবী অনেকটাই সরে এসেছে। বলা যায়, পরিস্থিতি এখন ঘুরে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেকর্ড হারে নীতি সুদ বাড়িয়ে চলছে। সৃষ্টি হয়েছে মন্দার আশঙ্কা। সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি কমে গেছে। ফলে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক ঋণ নিম্নমুখী। ঋণের পরিমাণ কমলেও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে ঋণের অনুপাত পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। খবর ন্যাশনাল নিউজের
সম্প্রতি প্রকাশিত ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের (আইআইএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ ৩০০ ট্রিলিয়ন ডলারে নেমেছে। বছরের প্রথম তিন মাসে সরকার ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩০৫ ট্রিলিয়ন ডলার। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে বৈশ্বিক ঋণ বৃদ্ধি পায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। এরপর জুনে শেষ হওয়া প্রান্তিকে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার হ্রাস পায়।
‘গ্লোবাল ডেট মনিটর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পর এপ্রিল-জুন সময়ে প্রথম বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ কমেছে, যদিও এর মূল কারণ হচ্ছে বিনিময় হার। চলতি বছর ডলারের বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিনিময় হওয়া অন্য ১০ মুদ্রার (জি ১০) বিনিময় হার ১২ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। এতে কমেছে ঋণের পরিমাণও। পাশাপাশি মন্দাও বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ কমাতে ভূমিকা পালন করেছে।
এদিকে কয়েক প্রান্তিক ধরে জিডিপির বিপরীতে বৈশ্বিক ঋণের অনুপাত নিম্নমুখী ছিল। তবে এপ্রিল-জুন সময়ে তা আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ অনুপাত আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আইআইএফ। এতে পাঁচ প্রান্তিক পর জিডিপির বিপরীতে ঋণের অনুপাত বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫২ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রথম প্রান্তিকে এ অনুপাত ছিল ৩৪৮ শতাংশ, ২০২১ সালে যা ৩৫১ শতাংশ ছিল।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্যিক ঋণ কমলেও বিভিন্ন দেশের সরকার অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ মোকাবিলায় আরও বেশি ঋণ নিতে পারে। আইআইএফ জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান সামাজিক উত্তেজনা, জ্বালানি ও খাদ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে সার্বভৌম ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগগুলো অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব মোকাবিলায় আরও ঋণ নিতে বাধ্য হবে, এমন আশঙ্কা আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কোভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২৫ লাখ কোটি ডলারের বেশি প্রণোদনা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ রেকর্ড উচ্চতায় ওঠার পেছনে এটিও অন্যতম কারণ।
আইআইএফ বলেছে, জুন পর্যন্ত শেষ তিন মাসে উন্নত দেশগুলোর সামগ্রিক ঋণ ৪ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার কমে প্রায় ২০১ লাখ কোটি ডলার হয়েছে। এ সময় কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ঋণ বেড়েছে।
এদিকে ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যেভাবে একযোগে সুদের হার বাড়াচ্ছে, তা গত পাঁচ দশকে আর দেখা যায়নি। এ প্রবণতা আগামী বছরও অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে করোনা মহামারির আগে মূল্যস্ফীতি যে পর্যায়ে ছিল, সেখানে ফিরে যেতে এসব পদক্ষেপ যথেষ্ট না-ও হতে পারে বলে ধারণা।
১৯৭০ সালের মন্দার পর বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন সবচেয়ে সংকটে রয়েছে। আর আগের মন্দা শুরুর আগে মানুষের ব্যয়ের যে প্রবণতা ছিল, সে তুলনায় বর্তমানে মানুষ অনেক কম খরচ করছে। অর্থাৎ কমে গেছে ভোক্তার আস্থা।