রাজধানীর ছয়টি বাজার ঘুরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে শাকসবজিসহ মাছ ও মাংসের দামে বড় পার্থক্য দেখা গেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গত বুধবার রাতে মাঝারি আকারের একটি ফুলকপি পাইকারিতে কমবেশি ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ আগারগাঁওয়ের তালতলা বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ওই রকম একটি ফুলকপি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আশপাশের পাড়া-মহল্লায় দাম আরও পাঁচ টাকা বেশি। অর্থাৎ পাইকারি বাজার থেকে মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার দূরে খুচরায় একেকটি ফুলকপি ১৫–২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়।
বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কিনে আনতে পরিবহনসহ কিছু খরচ রয়েছে। এ ছাড়া খুচরা বিক্রির সময় পরিমাণে কিছু বেশি দিতে হয় এবং কিছু পণ্য নষ্টও হয়। এরপর অল্প কিছু লাভে তাঁরা পণ্য বিক্রি করেন। অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা।
শুধু তালতলাই নয়, রাজধানীর অন্যান্য বাজারের চিত্রও একই। সরেজমিনে গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আগারগাঁওয়ের তালতলা থেকে শুরু করে রাজধানীর মিরপুর–৬, বর্ধিত পল্লবীর দুয়ারীপাড়া, মোহাম্মদপুর টাউন হল, শাহজাহানপুর ও মালিবাগ—এই ছয় বাজার ঘুরে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের দ্রব্যমূল্যে বড় পার্থক্য দেখা গেছে।
বাজারে শীতকালীন শাকসবজির সরবরাহ বেড়েছে। তাতে কিছুদিন ধরে এগুলোর দাম কমেছে। সেই সঙ্গে দাম কমেছে ডিম আর গরুর মাংসের। তবে আগে থেকেই বেড়ে যাওয়া চাল, আটা, ডাল, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম এখনো উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে আছে।
রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোয় আকারভেদে একেকটি ফুলকপির দাম ২০–৩৫ টাকা। সেই ফুলকপি মিরপুর–৬, হাতিরপুল ও টাউন হল বাজারে ৪৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দুয়ারীপাড়া, শাহজাহানপুর ও মালিবাগ বাজারে তা বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, শিম ও কাঁচা মরিচের দামেও এ ধরনের পার্থক্য দেখা যায়।
গত দুই দিনে পাইকারি বাজারে প্রতিটি বাঁধাকপি ২৫-৩০, লাউ ৩৫-৪০; প্রতি কেজি বেগুন ২৫-৩৫, শিম ২৫-৩০, দেশি পেঁয়াজ ১০৩-১১০ ও কাঁচা মরিচ ৫০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে খুচরা পর্যায়ে বাজারভেদে প্রতিটি বাঁধাকপি ৪০-৫০, লাউ ৪০-৮০ এবং বেগুন, শিম প্রতি কেজি ৪০-১০০, দেশি পেঁয়াজ ১১০-১২৫ ও কাঁচা মরিচ ৮০–১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থাৎ এসব পণ্যে পাইকারির তুলনায় খুচরা বাজারে দামের পার্থক্য ১৫ থেকে ৫৫ টাকা পাওয়া গেছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় পণ্যের দামে বেশ পার্থক্য দেখা গেছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উচ্চ ও উচ্চমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি বাস করেন—এমন এলাকার বাজারে ভালো মানের ও বড় আকারের পণ্য বিক্রি হয়। ফলে দামও বেশি থাকে। যেমন আগারগাঁওয়ের তালতলা বাজারে গতকাল যে কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, সেই একই মানের কাঁচা মরিচ মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে ১২০-১৬০ টাকা ও মালিবাগ বাজারে ১৪০-১৬০ টাকায় কেনেন ক্রেতারা। অর্থাৎ বাজারভেদে ৪০-৬০ টাকা পর্যন্ত দামের ব্যবধান রয়েছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হলের সবজি বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সবজির দাম বেশি বলা যাবে না। আমরা সব খরচ মিটিয়ে খুব অল্প লাভে পণ্য বিক্রি করতে পারি। কখনো কখনো লোকসানও হয়।’
মাছ-মাংসের ক্ষেত্রেও বাজারভেদে দামের পার্থক্য রয়েছে। যেমন প্রতি কেজি রুই মাছ ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ১৬০-২২০ ও তেলাপিয়া ১৬০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, শীতের সবজি আসতে শুরু করায় এগুলোর দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে ১৫-২০ শতাংশ বাড়তি পরিবহন খরচ লাগছে। তা না হলে দাম আরেকটু কমত।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গরুর মাংসের দাম বাজারভেদে ৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিছু বাজারে অবশ্য গরুর মাংস চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর-৬ কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, ‘আমাদের বাজারে গ্রাহকেরা ভালো মানের গরুর মাংস চান। কিন্তু ভালো মানের গরুর দাম এখনো বেশি।’
বাজারে গত এক মাসে চালের দাম কেজিতে দুই–চার টাকা বেড়েছে। খুচরায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম। বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। মাঝারি মানের চাল ৫৯ থেকে ৬০ টাকা এবং সরু চালের মধ্যে মিনিকেট মানভেদে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত এক মাসে আটার দাম কেজিতে ১০ টাকা ও ময়দায় ৫ টাকা বেড়েছে। দুই কেজির মোড়কজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এদিকে আমদানির পরও আলুর বাজার চড়া রয়েছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সালমা আলম বলেন, ‘কিছু সবজির দাম কমেছে। কিন্তু বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম অনেক বেশি।’