স্থানীয় উৎস থেকে টাকার জোগান কমে যাওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন বিদেশি অর্থের ওপরই বেশি ভরসা করতে হচ্ছে সরকারকে। এ জন্য আগামী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ধরা হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের চেয়ে এডিপিতে বিদেশি সহায়তা বেড়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো দেশজ উৎস থেকে দেওয়া অর্থের পরিমাণ কমানো হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা।
সার্বিকভাবে আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা জোগান দেওয়া হবে স্থানীয় উৎস থেকে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে স্থানীয় মুদ্রায় বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি সহায়তা হিসেবে ধরা হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন করা হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনাসচিব সত্যজিত কর্মকার সাংবাদিকদের নতুন এডিপির বিভিন্ন বিষয় অবহিত করেন।
সভায় স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপিও অনুমোদিত হয়েছে।
সত্যজিত কর্মকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে বিদেশি ঋণছাড় ও বাস্তবায়নে বাড়তি চেষ্টা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিকল্পনাসচিব আরও বলেন, সম্পদের আহরণ ও ব্যবহার চিন্তা করে আগামী এডিপির আকার মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতি সমন্বয় করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই আগামী বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য।
আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩২১টি। এ ছাড়া এডিপি বইয়ের সবুজ পাতায় নতুন অননুমোদিত ও বরাদ্দহীন প্রকল্প হিসেবে আছে ১ হাজার ২২৫টি।
পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম বলেন, এখন থেকে উপজেলাভিত্তিক কোনো প্রকল্প হবে না। জেলার উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা করা হবে।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ তেমন একটা বাড়ানো হয়নি। আগামী অর্থবছর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যাতায়াত এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি—এই দুটি খাতকে। এই দুটি খাতে মোট এডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সব মিলিয়ে মাত্র ২০ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে।
নতুন এডিপিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট এডিপির প্রায় ২৭ শতাংশ বা ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। রাজধানীর নতুন মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা রেলসেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ চলমান বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে খাতটিতে।
আগামী বছরের এডিপিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১৫ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা, যা মোট এডিপির প্রায় ১২ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে শীর্ষ ১০টি খাতে মোট এডিপির ৯০ শতাংশের বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধে৵ পরিবহন ও যাতায়াত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা রয়েছে; অন্য খাতগুলোর মধ্যে গৃহায়ণ খাতে ২৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা; স্বাস্থ্যে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা; স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা এবং কৃষি খাত ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৬ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।