সেমিকন্ডাক্টর খাতের উন্নয়নে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে কাজ করবে। এই টাস্কফোর্স চিপ ডিজাইন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সংযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে।
সেমিকন্ডাক্টর: বাংলাদেশে অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র শীর্ষক এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিডার প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
সিরাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, সেমিকন্ডাক্টর খাতের উদ্যোক্তা, গবেষক, প্রবাসী বাংলাদেশি ও সরকারের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে; এই টাস্কফোর্সের কাজ হবে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বাধা চিহ্নিত করে সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া। অংশীদারদের প্রতি তাঁর আহ্বান, বিডাকে এক দরজায় সেবা দেওয়ার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করা। সরকারের নীতি ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে যেন তারা কাজ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে তাঁদের এই উদ্যোগ।
সভায় গ্রিন কোয়েস্টের প্রতিষ্ঠাতা মাশুক রহমান মূল বক্তব্য পেশ করেন। সেমিকন্ডাক্টর মূল্য শৃঙ্খলে অগ্রাধিকারমূলক যেসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ও কী করলে এই খাতের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি।
বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টর খাত থেকে বার্ষিক ৬০ লাখ ডলার আয় করছে। মূলত আইসির নকশা তৈরির কাজ করে বাংলাদেশ। প্যাকেজিং, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সংযোজনে এই খাতের সম্প্রসারণের সুযোগ আছে। এখন বাংলাদেশের কাজ হবে, যথাযথ নীতি প্রণয়ন, এই খাতের প্রচার-প্রচারণা ও সক্ষমতা তৈরি।
সিলিকন ভ্যালিভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি আলকাসেমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো. এনায়েতুর রহমান করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাদানের ধরন উন্নত করতে হবে এবং ছাত্ররা যে শিক্ষা গ্রহণ করছেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এই খাতে কী ধরনের কাজ করতে হয়, ছাত্ররা যেন তা বুঝতে পারেন, সে লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে আমরা আরও যুক্ত হতে চাই।’
সভায় যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ সুরক্ষা, নির্দিষ্ট কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিকন্ডাক্টরবিষয়ক কোর্স চালু, যৌথ প্রশিক্ষণব্যবস্থা চালু, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দিয়ে এই শিল্পের প্রচার ও প্রচারণা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ প্রমুখ। এ ছাড়া প্রাইমসিলিকন টেকনোলিজ, তাহো কমিউনিকেশন্স, নিউরাল সেমিকন্ডাক্টর লিমিটেড, হাইসন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ইন্টগ্রেটেড ডেভেলমপমসেন্ট ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআইএ)। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এরই মধ্যে ১০টির বেশি দেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। চিপের নকশা থেকে শুরু করে প্যাকেজিংয়ের মতো কাজের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তারা। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প: সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা।