আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। একক খাত হিসেবে নতুন বাজেটে এটিই বৃহত্তম ব্যয়। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে সম্পদের ব্যবহার অংশে দেখা যায়, সুদ বরাদ্দেই সবচেয়ে বড় অঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল বৃহস্পতিবার পেশ করা জাতীয় বাজেট বক্তব্যে বিপুল এই বরাদ্দের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমা বিশ্ব ২০২২ সাল থেকে ধাপে ধাপে সুদের হার বাড়িয়েছে। আমাদের দেশেও বাড়াতে হয়েছে। পাশাপাশি মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।’
একক খাত হিসেবে নতুন বাজেটে এটিই বৃহত্তম ব্যয়। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে সম্পদের ব্যবহার অংশে দেখা যায়, সুদ বরাদ্দেই সবচেয়ে বড় অঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে।
বাজেটের সংক্ষিপ্তসার অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে সুদবাবদ যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে ৯৩ হাজার কোটি অভ্যন্তরীণ তথা দেশি ঋণের ও ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে যাবে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদ ব্যয় বাবদ মোট ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। অর্থ বিভাগ সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যে বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করেছে। এর মধ্যে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকার পুরোটাই অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই খরচ হয়ে গেছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
ঋণের সুদের সঙ্গে ঋণের পরিমাণের সম্পর্ক রয়েছে। ঋণ বেশি হলে সুদ বেশি হওয়াটাই সংগত। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত দুই বছরে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে স্থানীয় টাকার অবমূল্যায়নের (অবচিতি) ফলে বৈদেশিক ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় বেড়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ও ঋণ সহনীয় পর্যায়েই থাকবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমা বিশ্ব ২০২২ সাল থেকে ধাপে ধাপে সুদের হার বাড়িয়েছে। আমাদের দেশেও বাড়াতে হয়েছে। পাশাপাশি মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী
সুচিন্তিত ও প্রাজ্ঞ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি কৌশল অবলম্বনের ফলে বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে—বাজেট বক্তৃতায় এ কথাও তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ তথ্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ। নতুন বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস এবং ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ঋণের সুদ বাবদ এত বেশি টাকা বরাদ্দ রাখার কারণে সরকারের অনেক অগ্রাধিকার খাত ভালো বরাদ্দ পাচ্ছে না বলে সমালোচনা রয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রতিবছর বাজেটের আকার যেভাবে বাড়ছে, সে হারে রাজস্ব আয় বাড়ছে না। তাই বাজেটের অর্থায়নে ঋণের প্রাধান্য বাড়ছে।
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।