উদ্ভাবন সূচকে ১৪ ধাপ এগোল বাংলাদেশ

যন্ত্রের উদ্ভাবনী ব্যবহারে বাংলাদেশের মানুষের মুনশিয়ানা আছে। পানি উত্তোলনের শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিন দিয়ে গাড়ি বানানো, নৌকা চালানো থেকে শুরু করে ধান কাটা—কী না হয় এই দেশে! তা সত্ত্বেও বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে বাংলাদেশ বরাবরই পিছিয়ে, যদিও ২০২২ সালের সূচকে বাংলাদেশ ১৪ ধাপ এগিয়েছে।

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) উদ্ভাবন সূচকে ২০২১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৬তম—২০২২ সালে ১৪ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১০২তম। ১৩২টি দেশের মধ্যে এই সূচক করা হয়।

সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ৭। সূচকের শীর্ষ দেশ সুইজারল্যান্ডের স্কোর ৬৪ দশমিক ৬। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এই স্কোর তার উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, মানবসম্পদ, গবেষণা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিশীলনের ওপর তার স্কোর নির্ভর করে।

এবার দেখে নেওয়া যাক, সূচকের কোন উপসূচকে কেমন করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো করেছে সৃজনশীল উপসূচকে। এই খাতে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে ৩৬ ধাপ। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান উপসূচকে বাংলাদেশ ১৩ ধাপ এগিয়ে ২০২২ সালে ১০৯-এ উঠে এসেছে। মানবসম্পদ গবেষণায় অবশ্য অগ্রগতি মাত্র এক ধাপ—১২৮ থেকে ১২৭। অবকাঠামোতেও অগ্রগতি মাত্র এক ধাপ।

প্রায়ই খবর আসে, দেশের কোনো এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেউ বিশেষ কিছু উদ্ভাবন করেছেন। যেমন রাজু নামে ভোলার এক কিশোর তৈরি করেছে জ্বালানিবিহীন মোটরসাইকেল। বগুড়ার যন্ত্রকৌশলী আমির হোসেন উদ্ভাবন করেছেন জ্বালানিবিহীন গাড়ি। বলা হয়েছে, মাত্র ২৫ টাকার কার্বন খরচ করেই এ গাড়ি টানা আট ঘণ্টা চলতে পারে, বহন করতে পারে যাত্রী ও মালামাল।

ফরিদপুরের স্বল্পশিক্ষিত দরিদ্র যুবক হাবিবুর রহমান ইমরান এমন একটি গাড়ি উদ্ভাবন করেছেন, যা জলে, স্থলে সমানভাবে চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ছাড়া বাল্ব জ্বালানো, মোবাইল-নিয়ন্ত্রিত হুইলচেয়ার বানানোসহ নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন এ দেশের তরুণ উদ্ভাবকেরা।

বাংলাদেশ উদ্ভাবনে ভালো করছে। কিন্তু দেখা গেছে, উদ্ভাবনকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় ঘাটতি আছে। বিশ্লেষকেরা বলেন, এসব উদ্ভাবন বাণিজ্যিক পর্যায়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেই। সেগুলোর পেটেন্ট বা মেধাস্বত্ব নিয়ে কেউ চিন্তাই করেন না। বাস্তবতা হচ্ছে, উদ্ভাবনকে টেকসই করতে হলে অবশ্যই তাকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করে তুলতে হবে।

মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে হবে। তা না হলে নতুন উদ্ভাবনে কেউ উৎসাহিত হবেন না। সে কারণেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে।

এদিকে প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। তার র‍্যাঙ্কিং ৪০। এরপর শ্রীলঙ্কা আছে ৮৫ ও পাকিস্তান আছে ৮৭ নম্বরে। নেপাল আছে ১১১ নম্বরে। এ ছাড়া এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়া আছে যথাক্রমে ৭৫ ও ৯৭তম স্থানে।