পিএমআই সূচকের গ্রাফিক চিত্র
পিএমআই সূচকের গ্রাফিক চিত্র

তিন মাস পর গতি ফিরল অর্থনীতির 

অক্টোবর মাসের এই সূচক প্রকাশ করা হয় গতকাল। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতিতে গতি ফিরলেও এখনো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। 

গত মাসে সম্প্রসারণের ধারায় ফিরেছে দেশের অর্থনীতি। কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা—চার খাতেই গতি ফিরেছে। তাতে এসব খাতের সূচকের মান বেড়েছে। গত অক্টোবর মাসের পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স বা পিএমআইয়ের সার্বিক মান আগের মাসের চেয়ে ৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫৫ দশমিক ৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে এই সূচকের মান ছিল ৪৯ দশমিক ৭ পয়েন্টে। 

ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের শতবর্ষের পুরোনো সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে এই সূচক প্রণয়ন করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার অক্টোবর মাসের পিএমআই প্রকাশ করা হয়। তাতে বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে গত মাসে অর্থনীতির সম্প্রসারণের চিত্র তুলে ধরা হয়। এর আগে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর—তিন মাস অর্থনীতি সংকোচনের ধারায় ছিল। 

অর্থনীতির মূল চারটি খাতের কার্যক্রমের ভিত্তিতে পিএমআই তৈরি করা হয়। খাতগুলো হচ্ছে কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা। চলতি বছরের মে মাসে প্রথম পিএমআই প্রকাশ করা হয়। যদিও ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে সূচকের মান নির্ণয় করা হচ্ছে। চার খাতের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট খাতের সূচকের মান নির্ধারণ করা হয়। মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে পিএমআইয়ের মান নির্ণয় করা হয়। 

■ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাস অর্থনীতি সংকোচনের ধারায় ছিল। ■ অর্থনীতির চারটি মূল খাতের (কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা) কার্যক্রমের ভিত্তিতে পিএমআই তৈরি করা হয়।

অক্টোবরের পিএমআই বিষয়ক এক বিজ্ঞপ্তিতে মেট্রো চেম্বার ও পলিসি এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, গত মাসে কৃষির পিএমআই সূচকের মান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ পয়েন্টে। সেপ্টেম্বরে এ খাতের সূচকের মান ছিল ৪৭ পয়েন্ট। অক্টোবরে উৎপাদন খাতের সূচকের মান বেড়ে হয়েছে ৫৬ দশমিক ৬ পয়েন্ট। সেপ্টেম্বরে এই খাতের সূচকের মান ছিল ৫২ দশমিক ৬ পয়েন্ট। 

এ ছাড়া নির্মাণ খাতের পিএমআই সূচকের মান ৪ পয়েন্টের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ১ পয়েন্টে। সেপ্টেম্বরে এ খাতের সূচকের মান ছিল ৪৬ পয়েন্ট। সেবা খাতের পিএমআই সূচকের মান বেড়ে হয়েছে ৫৬ দশমিক ৯ পয়েন্ট। সেপ্টেম্বরে যে মান ছিল ৪৯ দশমিক ৪ পয়েন্টে। 

পিএমআই সূচকের মান ৫০-এর নিচে থাকার অর্থ হলো, অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। আর ৫০ পয়েন্টের বেশি থাকা মানে অর্থনীতি সম্প্রসারণের ধারায় রয়েছে। অক্টোবরের পিএমআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি খাতের নতুন ব্যবসা ও অন্যান্য তৎপরতায় গতি এসেছে। যদিও এই খাতে কর্মসংস্থানের হার কমছে। এ ছাড়া উৎপাদন খাতের নতুন ব্যবসা, রপ্তানি, কারখানার উৎপাদন—সব ক্ষেত্রেই গতি ফিরেছে। কিন্তু এই খাতের আমদানি, কর্মসংস্থান, সরবরাহ—এসব ক্ষেত্রে এখনো সংকোচনের ধারা অব্যাহত আছে। 

নির্মাণ খাতের ব্যবসা গত মাসে সম্প্রসারণ হলেও গতি ছিল অন্যান্য খাতের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নির্মাণ খাতে উপকরণের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছুটা সংকোচন হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন মাস পর অর্থনীতি সম্প্রসারণের ধারায় ফিরলেও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়া, প্রশাসনিক কাজের গতি কমে যাওয়া—এগুলোকে অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তাই ভবিষ্যতে অর্থনীতির মূল চারটি খাতের সম্প্রসারণ হলেও গতি কমে যাবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার জেরে গত জুলাইয়ে দেশের অর্থনীতির প্রধান চারটি খাত সংকুচিত হয়। তাতে পিএমআইয়ের মান নেমেছিল ৩৬ দশমিক ৯-এ। এর আগের মাসে অর্থাৎ জুনে যা ছিল ৬৩ দশমিক ৯। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে পিএমআই মান ২৭ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। আগস্টে সূচকের মান বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ দশমিক ৫ পয়েন্টে। আর সেপ্টেম্বরে পিএমআই মান ছিল ৪৯ দশমিক ৭ পয়েন্টে।