পর্যটন মৌসুম

সিলেটে পর্যটক বেশি, কক্সবাজারে কম

সুবিধা বাড়ায় সিলেটে দিন দিন পর্যটকের আগ্রহ বাড়ছে। সেই তুলনায় কক্সবাজারে পর্যটক কম যাচ্ছে। এতে সেখানকার ব্যবসায়ীরা চিন্তায় পড়েছেন।

বাংলাদেশে এখন পর্যটন মৌসুম
ফাইল ছবি

ভরা মৌসুমেও কক্সবাজারে পর্যটকদের আনাগোনা কম। সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল সীমিত থাকায় কক্সবাজারে পর্যটক কমেছে বলে দাবি সেখানকার ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে সিলেটে এবার বেশ ভালো পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন। অবকাঠামো উন্নয়নের সুবাদেই সিলেটের পর্যটনে চাঙা ভাব।

দেশে সাধারণত ডিসেম্বর মাসে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার সময়েই পরিবার নিয়ে অনেকে ঘুরতে বের হন। সে ক্ষেত্রে দেশের বড় দুটি পর্যটন শহর কক্সবাজার ও সিলেটকেই পছন্দের শীর্ষে রাখেন ভ্রমণপিপাসুরা। ব্যবসায়ীরাও সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। তবে এবার কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ সাড়া পাননি। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ৫০-৬০ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ঘুরতে যেতে পারেন, এমন আশায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার হোটেল-অতিথি হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সময়ে কক্সবাজারে বিজয় দিবস উপলক্ষে পর্যটকদের আনাগোনা হতো অনেক বেশি। সেটা বছরের শেষ দিন পর্যন্ত থাকত। হোটেলে রুম না পেয়ে সড়কের কিনারে বা গাড়িতে রাত কাটানোর মতো ঘটনাও অতীতে চোখে পড়েছে। কিন্তু এবার সেভাবে পর্যটক নেই। সামনের শুক্র-শনিবার কিছু রুমের বুকিং থাকলেও ৩১ ডিসেম্বরের জন্য অতিথিরা রুম বুকিং করছেন কম।

এদিকে সিলেটের ব্যবসায়ীরা জানান, এবার তাঁরা ভালো ব্যবসা করছেন। ডিসেম্বরের শুরু থেকে প্রচুর অতিথি যাচ্ছেন সেখানকার হোটেল-মোটেলগুলোয়। তবে ব্যবসা এখনো করোনার আগের অবস্থায় ফেরেনি। মৌসুমজুড়ে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে) সিলেটে দুই থেকে আড়াই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করবেন বলে আশা করছেন তাঁরা।

সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেটে এবার পর্যটকের আগমন ভালো। ডিসেম্বরে চাপ বেড়েছে। আশা করা যাচ্ছে, ২৩, ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর সিলেটের সব হোটেল-মোটেল ভরা থাকবে। বছরের শেষ দিনগুলোর জন্য প্রচুর বুকিং মিলছে। ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরের মতো পর্যটন স্পটে ইতিমধ্যে শত শত গাড়ি নিয়ে পর্যটকেরা ভিড় করছেন বলে জানান সিলেটের প্রবীণ এই হোটেল ব্যবসায়ী।

ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর পর্যটন এলাকার ইঞ্জিনচালিত নৌযান চালক তারেক আহমেদ বলেন, ছুটির দিনে ভিড় থাকে বেশি। তাতে এখানকার শতাধিক নৌকা দিনে অন্তত পাঁচ–ছয়বার যাতায়াত করতে পারে। নৌকার ব্যবসা বেশ ভালো হচ্ছে। তবে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া যাতায়াতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল সীমিত করার কারণে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা কমেছে। তবে কেউ কেউ মনে করেন, কক্সবাজারকেন্দ্রিক পর্যটনসেবার মান নিয়ে এখন প্রশ্ন আছে। ভরা মৌসুমে এখানকার ব্যবসায়ীরা রুমভাড়া দ্বিগুণ করে ফেলেন। খাবারের খরচ বেশি ধরেন। তা ছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক উন্নয়নের কাজ চলায় যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়েছে। এ কারণে কক্সবাজারের পর্যটক কমেছে।

এ ব্যাপারে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, কক্সবাজারে যাঁরা আসেন, তাঁরা প্রথমে এক-দুই রাত থেকে সেন্ট মার্টিনে যেতেন। তারপর ফিরতি পথে আবার থাকতেন। কিন্তু এবার সেই অবস্থা নেই। কিছু পর্যটক এলেও এক–দুই দিনের বেশি থাকছেন না। অনেকে শুধু কক্সবাজার ঘুরতে আসতে আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন। এ কারণে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ তুলে আনা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।

তবে এবার কক্সবাজারে আকাশপথে পর্যটক বেড়েছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা। দেশীয় পুরোনো বিমান সংস্থা তো বটেই, সদ্য বাজারে আসা এয়ার অ্যাস্ট্রাও ভালো যাত্রী পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রুবায়েত উল জান্নাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি বিমানই যাত্রীবোঝাই হয়ে যাতায়াত করছে। নতুন বিমান সংস্থা হলেও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি। আগামী এক মাসের মধ্যে আমাদের বহরে আরও দুটি বিমান যোগ হতে যাচ্ছে।’

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেটকক্সবাজার