দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পাঁচটি প্রধান ক্ষেত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এগুলো হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক পারদর্শিতা, যথাযথ পরামর্শের অভাব, নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, সম্পদের প্রাপ্যতা ও দুর্নীতি। এগুলোর সমাধান করা গেলে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হবে এবং বিনিয়োগও বাড়বে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়ে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। আলোচক হিসেবে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশের বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশের পর্যালোচনা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন আলোচকেরা। প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান অন্তবর্তী সরকার পুরোপুরি ব্যবসা বান্ধব; তবে প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দায়িত্বশীল ব্যবসা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কিছু উদ্বেগ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে। আমরা এক এক করে তা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ওয়েবিনারে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, গত আড়াই সপ্তাহে তিনি দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অন্তত ২৩৫ জন প্রধান নির্বাহী ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। এতে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পাঁচটি ক্ষেত্রে প্রধান উদ্বেগের বিষয় জানা গেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এসব উদ্বেগ নিরসনে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।
আশিক চৌধুরী জানান, বিনিয়োগকারীদের অন্যতম প্রধান উদ্বেগ দেশের অর্থনৈতিক পারদর্শিতা নিয়ে। দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো দীর্ঘদিন ধরে ভালো নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে সম্প্রতি বেশ কিছু সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। যেমন মূল্যস্ফীতি কমছে, চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত হয়েছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকার পাচার করা অর্থ দেশে ফেরানোসহ আর্থিক খাতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের দ্বিতীয় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে যথাযথ পরামর্শের অভাব। আশিক চৌধুরী জানান, ‘প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একজন বিনিয়োগকারী ঠিকভাবে জানেন না যে তার প্রয়োজনের জন্য কোন দপ্তরে যাওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা একটি “সিঙ্গেল পয়েন্ট কন্টাক্ট” বা একক যোগাযোগের জায়গা তৈরির কাজ করছি। এর ফলে এক জায়গা থেকে তাঁরা প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ পাবেন।’
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা নীতির ধারাবাহিকতা চান। একই সঙ্গে তাঁরা সম্পদের প্রাপ্যতা নিয়েও সঠিক তথ্য জানতে চান। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান হলো আমরা কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। যেমন কোন অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ কোন সময়ের মধ্যে শেষ হবে, তা স্পষ্ট করে বিনিয়োগকারীদের জানানো হবে। এ ছাড়া দুর্নীতির বিষয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। দুর্নীতি কমাতে আমরা সম্পূর্ণ ডিজিটাল–পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনার পথে যাচ্ছি। আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে ব্যবসায়ের সব বাধা দূর করা ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন করতে আগ্রহী। সে লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে এ ধরনের একটি ওয়েবিনার আয়োজন করবে বিডা। সেখানে বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ ও মতামত নেওয়া হবে।